আজ : সোমবার ║ ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : সোমবার ║ ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয়াকান্ড : অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ! 

– রিয়াজ হায়দার চৌধুরী-

প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই যেন অভিযোগের খড়গ থেকে বাঁচতে চান ব্যাপক বিতর্কে জড়ানো প্রিয়া সাহা। প্রিয়া’র অভিযোগের সত্যাসত্য বিচারের বিতর্কে নেমে দেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক কিংবা বেনিয়া কোন শক্তিকে সুযোগ দিতে চাইনি। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন চেষ্টায় খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন শতাব্দীর প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে ঘিরে স্ববিরোধীতা ও বিতর্কে ফেলার অপচেষ্টা লক্ষণীয়। তাই নাগরিক হিসেবে কিছু প্রশ্ন তুলতেই পারি।
তাছাড়া প্রিয়া সাহা’র ভাষ্যমতে তাঁর মার্কিন মুলুকে ‘হঠাৎ সফর” আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ‘অকস্মাৎ সাক্ষাৎ’ প্রক্রিয়ার বর্ণনাটা প্রশ্নবোধক। একারনে প্রিয়া’র অভিযোগকে ঘিরে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়াটা অমূলক নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে প্রিয়া’র আত্মপক্ষ সমর্থনের ভিডিও। এর আগে ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া ঢালাও নালিশ করেন। অপরিণামদর্শী ভাবে দেশের ভাবমুর্তির তোয়াক্কা না করে করা সেই নালিশ যেমন দেশপ্রেমি কোটি কোটি মানুষের মন ভেঙ্গেছে, তেমন প্রিয়া’র আত্মপক্ষ সমর্থনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর উত্তরাধিকারের সমর্থক দেশবাসীর মনে যেন কুঠারাঘাত।

২ #
প্রিয়াকান্ডে শুরু থেকেই নীরবই ছিলাম। কিছু লিখতেই মন সায় দিচ্ছিল না । আশে পাশের চেনা মুখগুলোকে আরো বেশি চিনতে চাইছিলাম। তাছাড়া একদিকে শৈশব থেকে সম্প্রীতির পরিবেশে বেড়ে ওঠা আর সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ব্যবহার দেখে গা সওয়া পরিবেশে কোন মাতম তুলতে চাইনি।
আমিও মন্ডপে যাই। পুজার্থীদের চোখে আমিও খুঁজি বিশ্বশান্তির দ্যুতি। জন্মাষ্টমীতে আমিও র্্যলিতে থাকি । রাস উৎসবের উদ্বোধনী নাহলে সমাপনীতেও অতিথি হিসেবে থাকি। আমার শহরে ধর্মবিভেদের করাতের কোপে কেউ দেশ ছেড়েছেন বলে জানা নেই। এছাড়াও নানা আনুষাঙ্গিকতায় প্রিয়াকান্ডে নীরবই ছিলাম।
সম্প্রীতির বাংলাদেশ নিয়ে কেউ খেলছেন নাকি প্রিয়া নিজেই ব্যক্তিলাভে এমনটি করলেন তা অবশ্য ভাবিনি যে তা নয়।

৩ # প্রিয়াকান্ডে যেন তোলপাড়ই ওঠলো দেশে। এদেশের সনাতনী কিংবা সংখ্যালঘুদের মনের বেদনা কিংবা নিপীড়নের দুঃসহ ব্যাথা অনেক বছরেই বোবা কান্নায় হাওয়ায় মিলেছে। নিজের পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। প্রিয়া’র ভাষ্যমতে- তাঁর পরিবারও এমন আক্রমনের শিকার । তার অন্তর্জ্বালা থাকতেই পারে । তাঁর জন্য নিঃসন্দেহে আমরা সমব্যাথী। সারাদেশের সচেতন মানুষ নৈতিক ভাবে এমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০০১ কিংবা ২০০৪ সালের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রিয়া’র আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি নিজ এলাকায় নিজেদের ৩০০একর ভূসম্পত্তি লুন্ঠনের যে অনভিপ্রেত হৃদয় বিদীর্ণ করা বর্ননা দিয়েছেন তা এদেশের সামগ্রীক চিত্র নয়। তাছাড়া তিনি ২০০৪সালের বিএনপি-জামায়াতের সময় কালের ঘটনাকে বর্তমান সময়ের প্রতিপাদ্য করে তূলেছেন । জামায়াত নেতার লুন্ঠনের দায় তিনি যেন এই সময়ে এসে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে তুলেছেন। এ যেন হেমন্তের রাতে বর্ষার ছাতা ধরা !

নিজের বক্তব্যকে জায়েজ করে নেয়ার চেষ্টার পাশাপাশি স্ববিরোধীযই করলেন তিনি।
ট্রাম্পের কাছে নালিশে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ৩কোটি ৭০লক্ষ লোককে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে কল্পনা প্রসুত অবাস্তব দাবি’র তিনদিন না যেতেই অনেকটা নিজের সেই বক্তব্যেরই পক্ষে প্রিয়া বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরন করেই’ তাঁর এসব কথা ।
২০০১সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজেই নির্বাচন পরবর্তী সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিরুদ্ধে এমন বলেছেন বলে দাবি প্রিয়া’র। ‘যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোন জায়গায় বলা যায়-এবিষয়টি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই জেনেছেন’ বলেও জানান প্রিয়া।
প্রসঙ্গক্রমে সরকারের প্রকাশিত ,২০০১সালের পরিসংখ্যান বই ও অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের গবেষণার রেফারেন্সও দিলেন তিনি। জানালেন,১৯৪৭এর দেশভাগের পর মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৯.০৭ভাগের স্হলে বাংলাদেশে সনাতনী অবস্থান বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.০৭ভাগ। ‘বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে’ বলে বারাকাতের গবেষণা তথ্যের পূণরুল্লেখও করলেন প্রিয়া।
২০০৪সালে পিরোজপুরে নিজের গ্রামে থাকা ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবারের মধ্যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় বর্তমানে মাত্র ১৩টি পরিবার রয়েছে বলেও দাবি প্রিয়া’র । সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে না বাড়ার কারণ হিসেবেই সাম্প্রদায়িক নিপীড়নে দেশত্যাগকেই উল্লেখ করেছেন তিনি।

৪ #
প্রিয়া যত যুক্তি দিয়েই ট্রাম্পকে দেয়া বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করুন না কেন তাঁর কিংবা তাঁর বক্তব্যের সমর্থকরদের এটাও বুঝা উচিত, ২০০১ আর ২০০৪এর বাংলাদেশ আর এখনকার দেশ এক নয়। সেসময় বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নির্যাতন চলেছে সেই পরিবেশ কি এখন আছে? ২০০৪ সালে তো খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রীকেই প্রাণে মেরে ফেলতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড ছুঁড়া হয়। সারাদেশেই এক যোগে বোমা হামলা হয়। সেই বাংলাদেশ এখন নেই। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সংকট মাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘাতকদের বিচারও করে কালিমা মুক্তির পথেই হাঁটছে দেশ।
শুধুই অর্থনীতি সমৃদ্ধি আর যাপিত জীবন ও বৈশ্বিক মর্যাদাগত সুচকেই আমরা এগিয়ে যাইনি, মানবিকতায় বিশ্ববিবেক ছুঁয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনা। শুধু অভ্যন্তরীণ সংখ্যালঘু সহিংসতা রোধ করে নয় নিকট প্রতিবেশী মিয়ানমারের ১১লক্ষ আঞ্চলিক সংখ্যালঘুকে বুক পেতে ঠাঁই দিয়েছে বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ। প্রিয়া কিংবা তাঁর বক্তব্যের সমর্থকেরা কি একথা ভুলে গেছেন ?!

৫ #
বিএনপি-জামায়াত সরকারকালীন জামায়াত এমপি ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দন্ড প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সংসদীয় এলাকার ২০০৪ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান আরেক জামায়াতি নেতা মজিবুর রহমান শামীম গংয়ের যে তান্ডব চিত্র প্রিয়া তুলে ধরেছেন তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এখানেই , বাংলাদেশ যখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে হাঁটছে তখন হেমন্তেই বর্ষা বন্দনার মত প্রিয়া সেই বিএনপি-জামায়াত জোটের পাপাচারের তিলক কি প্রিয়া পড়িয়ে দিলেন না আওয়ামী লীগের কপালে ?
তিনি (প্রিয়া) সমালোচনার মুখে পড়ে এখন যতই প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক অবস্থানের সন্মান স্বীকৃতিসুচক কথা বলুন না কেন তা যেন এখন আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক কর্মীদের কিংবা দলের বাইরেও প্রধানমন্ত্রীর অগুণতি সমর্থকের কাছে ‘জুতা মেরে গরু দান’র নামান্তর।
জামায়াতি সাঈদী-শামীমের সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কীটের বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে “দুষ্টু লোকেরা সব সময় সরকারি দল” বলে উল্লেখ করেও প্রিয়া শেখ হাসিনার সরকার ও দলকে প্রকারান্তরে দায়িই করলেন । গত ২২এপ্রিল ফের তাঁর গ্রাম আক্রান্ত হয় এবং গতমাসেও সাতক্ষীরা থেকে কতগুলো পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়’ বলে জানিয়ে প্রিয়া কি ক্ষমতাসীন সরকার ও আওয়ামী লীগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন না?
২০০৪থেকে ২০১৯। এই ১৫বছরের মধ্যে ১০বছরই ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। প্রিয়া কি তবে আওয়ামী লীগকেই দুষলেন ? তবে কী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধেই কৌশলে অভিযোগের আঙুল তুলে অন্যপক্ষকে সুযোগ দিলেন তিনি?
আচ্ছা, আগেও যখন বহূবার যুক্তরাষ্ট্র গেলেন, কেনইবা আগে কখনো সেখানে এমন অভিযোগ করেননি প্রিয়া?
নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম আলোচনায় আসাতেই কি কোন পক্ষের হয়ে এমন আজগুবি অভিযোগ আনলেন তিনি? আবার ২০০১ কিংবা ২০০৪সালের ঘটনার রেফারেন্সে এখন এসে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করার অভিযোগ করে ঐক্য পরিষদের ২৯বছরের পুরনো নেত্রী হিসেবে নিজেদের সংগ্রামের অন্তঃসারশূন্যতা বা ব্যর্থতারই কি প্রকাশ ঘটালেন প্রিয়া সাহা? -এমন সব প্রশ্নের অন্ত নেই।

৬ #
স্ববিরোধীয় ভরা আত্মপক্ষ সমর্থন তাঁর। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সরকার ও প্রশাসনের “জিরো টলারেন্স” এবং দেশের ৯৯শতাংশ মুসলমান এক হয়ে সনাতনীদের পাশে থাকা’র কথা স্বীকার করলেও ট্রাম্পকে দেয়া অভিযোগের বেলায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গ্রুপের কারনেই সনাতনীরা দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে , প্রায় শতভাগ মুসলমান পাশে থাকলেও সনাতনীরা দেশ ছাড়বেন কেন? এক্ষেত্রেও সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িকতার সংগ্রামের সাথে প্রিয়া’র প্রশংসার বিপরীতে এসব বক্তব্যে স্ববিরোধী।
এ যেন ‘সুখে থাকলে ভূতে কিলায়’ দশা। প্রগতির শক্তির পায়ে বেড়ি দিতেই যেন সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিলেন পিরোজপুরের প্রিয়া।

৭#
নিছক মার্কিন নাগরিকত্বের সুবিধার জন্য প্রিয়া এসব করেছেন বললেও বিষয়টির গভীরতারই মর্যাদা থাকে না। এনজিও করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী দেশ বা বিদেশের কোন এনজিও’র অর্থ নিয়েই দেশ বিরোধী এমন মিশনে নামলেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে জনমনে।
তাছাড়া ‘এক দিনের প্রস্তুতিতে মার্কিন মুলুকে যাওয়া, হঠাৎ করেই হোয়াইট হাউসে গমন ও ৪০মিনিট আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি জানতেন না’ বলেই প্রিয়া যে দাবি করেছেন, তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
১৯৯০ সাল থেকেই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে যুক্ত প্রিয়া সাহা পরিষদটির সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও কেন কাউকে না বলে হুট করে(তাঁরই বক্তব্য অনুযায়ী) যুক্তরাষ্ট্র গেলেন, ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট সরাসরি তাঁকে আমন্ত্রণ কেনই বা দিয়েছে, আসলেই সরাসরি দিয়েছে কিনা কিংবা প্রিয়া সাহার এই সফরে অন্য কোন যোগসূত্র ছিল কি না, নাকি প্রিয়া দেশ বিরোধী কোন শক্তির প্রতিনিধি? নাকি তিনি ড ইউনুস, তারেক রহমান, এস কে সিনহা’র ভাবশিষ্য? -এসব প্রশ্নের উত্তর খতিয়ে দেখার পক্ষেও দাবি ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।
প্রিয়ার বক্তব্যের পক্ষেও অনেকের জোরালো অবস্থান আছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা থাকতেই পারে। আবার এই দুই মতকে উস্কে দিয়ে দাঙ্গা সংঘাতও বাধিয়ে দিতে চায় একটি পক্ষ।

৮#
প্রিয়াকান্ডে অনেকের মুখ থেকে খসে পড়ছে মুখোশ। অনেকের ভেতরকার সব অন্ধকার বের হয়ে আসছে যেন দমিয়ে রাখা সাম্প্রদায়িক দৈত্যের শেখল ছাড়া মুক্তির আগ্রাসে। সমাজ রাষ্ট্র ও রাজনীতির জন্য এমন সময়গুলোয় চ্যালেঞ্জিং। এরকম সময়ে আমাদের এটাও ভুললে চলবে না যে, পিরোজপুর,রামূ রাউজান, অভয়নগর আর নাসিরনগরেই গোটা বাংলাদেশ নয়।
গত এক যুগে অন্তত আমাদের সম্প্রীতিগত অর্জন ট্রাম্পের মার্কিনীদের চেয়েও বেশি। একটু পেছন ফিরে দেখুন। অতীতের কালিমা মাড়িয়ে এসে আমরা কতটা এগিয়েছি। এখন দেশে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সাম্প্রদায়িকতার প্রকোপ বিস্তারি অপশক্তি হয় পর্যুদস্ত নয় আপোষে আছে । সম্প্রীতির প্রকাশও বেড়েছে কয়েকগুণ। ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি সরকারেও বেড়েছে অংশীদারিত্বের হিস্যা।
ঐক্য পরিষদের শীর্ষ সংগ্রামী নেতা এডভোকেট রানা দাশগুপ্তের শহর চট্টগ্রামের কথায় ধরা যাক। শারদীয় দুর্গোৎসবের মন্ডপ গত এক যুগে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বেড়েছে রথযাত্রা। রাম ঠাকুর আর অনুকুল ঠাকুরের ভক্তি নিবেদন বেড়েছে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে। প্রশাসন যেমন তেমনি সচেতন তারুণ্যও গেল ক’বছর পুঁজো ঈদ কিংবা উৎসব পার্বনে যে কোন অঘটন আশংকাকে মিথ্যে প্রমাণিত করেছে সম্প্রীতির ভ্যানগার্ড হিসেবেই। এমনই অসাম্প্রদায়িক প্রীতিময় চিত্র আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের ।

৯#
রাগ ক্ষোভ বা কোন পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি বা দুটি ঘটনার জাবর কেটে কোন বহিশক্তি বা অন্য কোন রাষ্ট্রকে অন্য কারো কারো মত সুযোগ করে দেবেন না প্লিজ !
এও ভুলে গেলে চলবে না যে, ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে শুধু ধর্মবিদ্বেষের খাতিরেই ভারতের বিপক্ষে যেয়ে পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়া লোকের সংখ্যা যেমন কম নেই তেমনি দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে এদেশের সনাতনীদের একটি অংশও এখনো মনে প্রাণে ভীত সন্ত্রস্ত। ভাবতেই খারাপ লাগলেও এই ক্ষুদ্র অংশটি এখনো মুদি দোকান থেকে চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক সেবার লেনদেনে নিজ ধর্ম গোত্রের সনাতনীদের উপরই ভরসা রাখেন।
এমন মনোভাবাপন্ন অংশটির অনেকে আবার কোন সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার না হলেও মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণেই এদেশে অর্জিত সহায় সম্পদ বিক্রি বাট্টা করেও দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ আবার সত্য গোপন করে নিকট প্রতিবেশী ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ভারত এবং বাংলাদেশ;দুশেরই নাগরিকত্ব নিয়েছেন।
দেশের আরেকটি পরিস্থিতি অনস্বীকার্য । সেটির জন্য নিঃসন্দেহে সনাতনী সম্প্রদায় সচেতনতার সূচকে এগিয়েই আছেন। গত অন্তত দুই যুগে দেশে ক্রমাগতভাবে সনাতনী জনসংখ্যা কমার সেটিই প্রধানতম কারন । আর তা হল জন্মনিয়ন্ত্রণ। এক্ষেত্রে সচেতনতায় সনাতনী সম্প্রদায়ের অবস্থান স্বীকার করতেই হয়।
ক্রমাগতভাবে সনাতনী জনসংখ্যা না বাড়া বা মানুষ গুলো “হারিয়ে যাওয়া”র এমন অনেক কারনই আছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা না বাড়া আর এত বিপুল পরিমাণ মানুষ দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়া বা দেশ ত্যাগ করা এক কথা নয়।
তবে এই অংশটির চেয়ে এখনো সম্প্রদায় ছাড়িয়ে বাঙালি জাতিয়তা ও গোটা বাংলাদেশ বিরোধী রাজনৈতিক প্রবাহ লালন করা লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এখনো তা হতে পারে ২৮থেকে ৩২ শতাংশ।
প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি গেল ১০বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও, রাজনৈতিক বাস্তবতা তাদের জন্য প্রতিকূল হলেও এই অংশটি একেবারে দমে তো যায়নি। বরং মৌলবাদের অর্থনীতির লগ্নী করছেন অনেক কথিত প্রগতিশীলও।

১০#
মনে রাখতে হবে , অদম্য অগ্রযাত্রার কারনেই বাংলাদেশকে নিয়ে সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র শুধু নয় দেশের বাইরের ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ঠেকাতে না পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্রের নতুন ডালপালা বিস্তার করবেই। সম্প্রীতি নষ্ট করে ধর্মীয় শ্রেণী বিভেদের উন্মত্ততায় দেশে এক নতুন অশনি সময় তৈরির অপচেষ্টায় হয়তো চলছে। আমরা প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে; দুই পক্ষই নিজের অজান্তেই সেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিচ্ছি না তো ?!
জীবনানন্দ দাশের ঝরা পালকের এমন কাব্য পঙতি মনে রাখলেই ভাল—
“এ দেশ নহেকো তোমার, নহকো আমার একা / হেথায় পড়েছে হিন্দুর ছাপ, মুসলমানের রেখা”।

( লেখক: সহ-সভাপতি, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আহ্বায়ক, নাগরিক উদ্যোগ )

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ