আজ : শনিবার ║ ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১৭ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জিপিএ নয়, জীবনই সবার আগে

একটা কাগজের নম্বর দিয়ে কি মাপা যায় একটি শিশুর স্বপ্ন?একটি মার্কশিট কি বলে দিতে পারে কে হবে আগামী দিনের বিজ্ঞানী, শিল্পী, কবি, উদ্যোক্তা কিংবা একজন মহানুভব মানুষ?
আমাদের সমাজে পরীক্ষার ফলাফল, বিশেষ করে এসএসসি বা এইচএসসি-র জিপিএ, এতটাই বড় হয়ে দাঁড়ায় যে সন্তানের চোখে ঘুম থাকে না, ঘরে শান্তি থাকে না। পরীক্ষার সময় ঘরে ঘরে চাপ, মানসিক ভয়, অপমানের আশঙ্কা আর তুলনামূলক বাক্যবাণ যেন অব্যাহত থাকে। “তোর বন্ধু তো জিপিএ-৫ পেয়েছে, তুই কেন পেলি না?” — এই প্রশ্নটি যেন অনেক সন্তানের কাছে হয়ে ওঠে মৃত্যুদণ্ডের মতো ভয়ংকর। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, জিপিএ-৫ পেলেও অনেকে কর্মজীবনে সফল হতে পারে না, আবার জিপিএ-৩ পেয়েও কেউ হয়ে যেতে পারে একজন শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক বা মানবদরদী চিকিৎসক।
সফলতা কখনোই একটি কাগজের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না।  “Number is what a paper carries. Character is what your child carries forever.” বরং নির্ভর করে তাদের উপর, যারা সাহস পায় ভালোবাসা থেকে, যারা বিশ্বাস পায় পরিবারের স্নেহ থেকে।  একজন শিশু তখনই ঘুরে দাঁড়ায়, যখন সে জানে— “আমি চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও, আমার পাশে আমার মানুষগুলো থাকবে।” আজ আমরা প্রায়ই দেখি, ফলাফল খারাপ হওয়ায় আত্মহত্যার খবর। এটা কেবল একটা শিশুর মৃত্যুই নয়, আমাদের সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে বাবা-মা বুঝিয়ে বলতে পারেননি— “আমার সন্তানের জীবনই সবার আগে, নম্বর নয়।” একজন সন্তানের কাছে আপনি কী হতে চান? শুধু এক কঠোর অভিভাবক? নাকি এমন একজন, যার কাঁধে মাথা রেখে সন্তান বলতে পারে— “বাবা, মা, আমি ভালো না করলেও তোমরা আছো, তাই ভয় পাই না।”সন্তান যদি জানে, তার চেষ্টা মূল্যায়িত হবে, তার কষ্টে পাশে দাঁড়ানো হবে— তবে সে আবারও লড়ে যাবে, স্বপ্নের জন্য, জীবনের জন্য। পরিণতি নয়, প্রক্রিয়াকে ভালোবাসুন পরীক্ষা একটি প্রক্রিয়া। ফলাফল একটি সময়ের প্রতিফলন, চিরন্তন বাস্তবতা নয়। জিপিএ একটি পরিসংখ্যান, কিন্তু সন্তান আপনার রক্ত, হৃদয়, ভবিষ্যৎ।
আসুন, আমরা অভিভাবকগণ বদলাই। আমরা বলি— “ফলাফল যাই হোক, তুই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।” এই একটি বাক্যই হয়তো আপনার সন্তানের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।  আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগে মানুষ হিসেবে গড়তে হবে—ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ।  আমরা কাগজ দেখি, কিন্তু মানুষ খুঁজি।
আর এই মানবিকতার খোঁজেই আমাদের লেখালেখি, আমাদের দায়বদ্ধতা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ