আজ : রবিবার ║ ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : রবিবার ║ ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২২শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১১ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

‘শাস্তি না হওয়ায় দুর্নীতি বাড়ছে’,

অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহুগুণে বেড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় এখন শীর্ষে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি করার পরও শাস্তি না হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে এবং দুদকের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

দুদকের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দায়ের করা ১৫৩টি মামলায় মোট ৪৭৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জনই সরকারি কর্মকর্তা। তালিকায় এরপরেই রয়েছেন ব্যক্তিগত চাকরিজীবী, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দেশে দুর্নীতির জন্য কারও শাস্তি হয় না; বরং তারা সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। একারণেই সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি বাড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও দুদকের কার্যকারিতার অভাব এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০২৩ সালের একটি জরিপেও দেশে সেবা খাতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। এতে বলা হয়, প্রায় ৭১ শতাংশ পরিবার সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে এবং সেবা পেতে ৫১ শতাংশ পরিবারকে ঘুষ দিতে হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে দুদক দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করে।

এর ফলে গত এক বছরে (জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫) ৩৯৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন আমলা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

যদিও দুদকের বিরুদ্ধে অতীতে সরকারের প্রভাব বলয়ে থেকে বিরোধী পক্ষকে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে, তবে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, তারা আইন ও প্রমাণের ভিত্তিতেই কাজ করছেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা যে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলে তদন্ত করা হবে।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৪ সালের দুর্নীতি ধারণা সূচক অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও অবনতি হয়ে ১৫১তম হয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৪৯তম।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ