
আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রবাদ পুরুষ। বাঙালী জাতির অহংকার। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বংঙ্গে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত শ্রেষ্ঠ বাঙালী কবিদের একজন। বিশেষ করে বিশ্বাসী বাংলাদেশীদের কাছে তিনি এখন শ্রদ্বার মুকুট। তিনি বয়সের ভারে এখন এক নতজানু কবি।তিনি নজরুল-ফররুখের মতোই রুচিশীল ও সৃজনশীল। খ্যাতির তোয়াক্কা তিনি করেন না।প্রতিটি বিশ্বাসী বাংলাদেশীর বইয়ের সেলফ আজ তার বইয়ে পরিপূর্ণ। এদেশের ঈমানদার বাগ্মী বক্তারা তার কবিতা আবৃতি করেন বক্তৃতার মঞ্চে। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন।পাঠকদেরকেও স্বপ্ন দেখান।তাই আজ তিনি সাহিত্যাঙ্গনে আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। কবি ফররুখের সাথে তার মিল বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। কবি ফররুখ যেমন ছিলেন ইকবালের ভক্ত ও অনুসারী, তেমনি আল মাহমুদ ও দারুণভাবে প্রভাবিত হয়ে ছিলেন কবি ইকবাল দ্বারা।ইকবালের প্রতি আল মাহমুদের শ্রদ্ধা অকৃত্রিম। ইকবাল নিয়ে তিনি “ইকবাল ” নামক কবিতায় লেখেন- ‘তোমার কথার বাতি জ্বলে ওঠে অন্তরে আমার ও দেশ নয়,কাল নয়,মানুষের ঈমানই সম্বল।’ ‘ ইকবাল স্মরণে’ তার অন্য এক কবিতায় তিনি লিখেন- যখন তার কথা ভাবি, তখন সংকুচিত হয়ে পড়ে হ্নদয়, উপমহাদেশের মানচিত্রের মতো তার বিশাল হ্নৎপিন্ড, আল্লাহর উপাসনার গুঞ্জন তুলে যখন ধুকধুক করতো, তখন তার ভ্রুজোড়ার তলদেশে নেমে আসত কল্লোলিত নদী। কবি ফররুখ যেমন ছিলেন শক্তিমান কবি ও সাচ্চা ঈমানদার, ঠিক তেমনি আল মাহমুদ ও স্বীয় আদর্শকে লালন করে যাচ্ছেন সযত্নে।কবি ফররুখ যেমন তার কবিতায় আরবি ও ফারসী শব্দে ব্যবহার করেছেন তেমনি আল মাহমুদ রচনাবলী পড়তে গেলেও অনেকগুলো পরিচিত আরবি শব্দের সন্ধান মেলে।যেমন – আল্লাহ, হযরত মোহাম্মদ (স:), জীব্রিল,কবর,কাফন, ঈমান,আমিন,সালাত,মালিক,তারিফ,সালোয়ার,মসজিদ, রেহেল,কোরআন, তাসবীহ,আযান,শরীয়ত, মদিনা,ঈমারত,খোদা,তরবারি, নেকাব, তাশরিফ,হাদিস,ঈদ,জায়নামাজ,মুরতাদ, সিজদা,ফজর,মিনার,অজু,আলেম,পয়গম্বর, কামিজ,কালিজ,কলব,জবান,সালাম,আল্লাহর কালাম,আরশ,আল্লাহর রহম,কসম,আমির,জেহাদ, তলোয়ার, সোয়ারি, জালিম,জিন,ছতর,ইবলিশ, হাজী,আমিরুল মোমেনিন,ইশক,গজল,শয়তান, নকীব, দজ্জাল, হক,ইমাম, মেশক,মাওলানা, ফেরেশতা, রসূল,মোমিন,মদিনা,গজব, দোজখ, নবী,নামাজ, আল-আকসা,আল-ফাতাহ,তাওয়াফ,মুসলমান, কাবা,জামাত,আল-কুদ্দুস,কদর,নুজুল,তৌহিদ, রুকু, সিজদা,পরোয়ার দিগার,হুর,হাজির,জানাজা, পুলসিরাত, ইলম,রাব্বি যিদনী ঈলমা,হালাল,ইজ্জত, ইসলাম ইত্যাদি। আল মাহমুদ কে ইংরাজি সাহিত্যের George Hervert – এর সাথে তুলনা করা যায়।তার কবিতায় যেভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন Christian theology ঠিক তেমনি ভাবে আল মাহমুদ এর কবিতায় ওঠে এসেছে ইসলামের কালজয়ী শাশ্বত সৌন্দর্য। তার কবিতায় নূহ নবীর জাহাজের কথা আছে,ইশ্বরের অলৌকিক আক্রোশের মহা প্লাবনের কথা আছে,ঈদের অপার খুশির কথা আছে।জুলেখার আহবান, নবী ইউসুফের চারিত্রিক দৃঢ়তা,আলীর খঞ্জরের বর্ণনা,ইব্রাহীমের বংশ গৌরব, সোলেমান পয়গাম্বরের পাখির ভাষা বুঝার ক্ষমতা,অন্ধকার যুগের হযরত মুহাম্মদ (স:) এর আবির্ভাব ও সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠা কোন কিছুই বাদ পড়েনি তার কবিতায়। এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে কবির সম্পর্ক।হে প্রভু, তাকে সুস্থতা দাও ও দীর্ঘজীবী করো। আর আজীবন তাকে রেখো কবি হাসসান- বিন- সাবিতদের কাতারে।