আজ : শনিবার ║ ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বই বিতরণ এলেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের আতঙ্কে আরডিসি নাজিম

২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বাগেরহাট সদর উপজেলার শহীদ নায়েক আব্দুল জব্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে পুলিশসহ দেড় শতাধিক মানুষ দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়ে প্যান্ডেলের ভেতর। হঠাৎ এমন অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। ভয়ে তারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে। সেদিনের সেই ঘটনা এখনও প্রতিবছর বই বিতরণ অনুষ্ঠানে এলেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মনে ভেসে ওঠে। এই তাণ্ডব চালানোর প্রধান ভূমিকায় ছিলেন কুড়িগ্রাম থেকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন।

ওই ঘটনার সময় বাগেরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন নাজিম উদ্দিন। ফিল্মি স্টাইলে বই বিতরণের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল দখল করে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।

নাজিম উদ্দিন কেন এমন করলেন—জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খান রেজাউল ইসলাম বলেন, “বই বিতরণ অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলের ভেতর হঠাৎ একদল মানুষ ঢুকে পড়ে। সব কার্যক্রম বন্ধ করে স্টেজে পুলিশ বসিয়ে দেয়। আমি লোকজনের কাছে শুনলাম তিনি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নদীর পাড়ে বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিওন শাহাদাতের ভাই কেরামত শেখকে দখল করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বাহিনী নিয়ে এসেছেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি (নাজিম উদ্দিন) ধমক দিয়ে বলেন, ‘মুখ থেকে একটা কথা বের করলেই মোবাইল কোর্ট দিয়ে জেলে পাঠাবো।’ সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ।”

আক্ষেপ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমার অনেক ছাত্র তার থেকেও অনেক বড় পদে আছে। সে আমার ছাত্রের থেকেও বয়সে ছোট হবে। সে কোনও শিক্ষকেরই ছাত্র হবে। সবার সামনে আমাকে যেভাবে ধমক দিলো, আমার মুখ থেকে আর কোনও কথা বের হয়নি। জীবনে এমন অপমান আমাকে কেউ করেনি। সেই কথা মনে উঠলে এখনও আমি সহ্য করতে পারি না। চোখে পানি চলে আসে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর বিষয়টি তৎকালীন জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসকে জানিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেননি। পরে আমরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও করেছিলাম। তাতেও কাজ হয়নি।’

শহীদ নায়েক আব্দুল জব্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয়
এ বিষয়ে ঘটনার দিন মঞ্চে থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার দিন হঠাৎ যেভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন পুলিশসহ তেড়ে আসেন, তাতে আমি মনে করেছিলাম তিনি কোনও দারোগা হবেন। পরে শুনলাম ম্যাজিস্ট্রেট। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমিও ভীত হয়ে পড়ছিলাম। পরে দেখি স্কুলের নিজস্ব জমিতে থাকা স্থাপনা ভেঙেই চলেছেন। কিন্তু আমি কোনও কথা বলার সাহস পাইনি। নিজের মান নিয়ে বিদ্যালয়ের পেছনের দিক দিয়ে বাড়ি চলে যাই।’

তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিয়নের ভাইকে বিদ্যালয়ের জমি দখল করিয়ে দিতে এসেছিলেন। আমরা এর কোনও প্রতিকার পাইনি। এটারও বিচার হওয়া জরুরি।’

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহিব্বুল্লাহ বলেন, ‘একজন ম্যাজিস্ট্রেটের এমন আচরণ হতে পারে, এটা আমি কোনোদিন চিন্তাই করিনি। যে লোক বড়দের সম্মান করে না, সে ভালো মানুষ হতে পারে না।’ তিনি ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিনের শাস্তির দাবি করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও বেমরতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘সেদিন ওই মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাসহ অনেক গুণী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের এমন অভদ্র আচরণ দেখে সবাই কষ্ট পেয়েছেন। বই বিতরণ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর সবাই যার যার মতো চলে যায়।’

প্রসঙ্গত, ১৩ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রামে প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা দিয়ে তাকে তুলে ডিসি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন শেষে মাদক দিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ আরিফ মুক্তি পান। এই ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও দুই সহকারী কমিশনারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ