
স্প্যানিশ লা লিগায় এবার বেশ নাটকীয়তা। একবার রিয়াল শীর্ষে তো আরেকবার বার্সেলোনা শীর্ষে। এভাবেই অনেকটাদুর এগিয়ে গেছে এবারের মৌসুম। আপাতত শীর্ষে বার্সেলোনা। এবার শীর্ষস্থান নিরঙ্কুশ করার সুযোগ বার্সার সামনে। আবার রিয়ালের সামনে শীর্ষে ফিরে আসার সুযোগ।
কোনটা হবে আজ রাতে? বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফুটবল লিগ লড়াই এল ক্ল্যাসিকোয় আজ মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বসেরা এই দুই ক্লাব।
লিগে এখনও পর্যন্ত ২৫টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। এরই মধ্যে ২৫ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে লিওনেল মেসির দল বার্সা। ২ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে জিনেদিন জিদানের দল রিয়াল মাদ্রিদ। আজ বার্সা জিতলে পয়েন্টের ব্যবধান হয়ে যাবে ৫। আর রিয়াল জিতলে এক পয়েন্টের ব্যবধানে তারা উঠে যাবে শীর্ষে। আর কোনোভাবে ড্র হলে বার্সাই থাকবে শীর্ষে।
এল ক্লাসিকো মানেই কোচেদের উত্থান-পতন। অতীতে এল ক্লাসিকো হেরেই বিদায় নিতে হয়েছে বিভিন্ন কোচকে। অথবা বিদায়ের রাস্তা পরিষ্কার হয়েছে কোচের। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার ঐতিহাসিক এল ক্লাসিকোতে কোচ বদলের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে।
রাফায়েল বেনিতেজ থেকে হুলেন লোপেতেগুই। এবার কি জিনেদিন জিদানের পালা? কিংবদন্তি ফরাসি ফুটবলারের সাফল্যের মুকুটে বহু কিছু রয়েছে। নেই লা লিগা। রোববারের এল ক্লাসিকোতে হারলে রিয়ালে জিদান জমানার কি শেষ হবে?
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা জিদান এই এল ক্লাসিকো জিততে না পারলে লা লিগার স্বপ্ন দেখা ছাড়তে হবে। জিদান অবশ্য সেই প্রসঙ্গ প্রেস মিটে উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘এসব প্রশ্ন অন্য কাউকে করুন। হেরে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। জিতলে আমরা শিরোপার দিকে এগিয়ে যাব; কিন্তু শিরোপা পেয়ে যাব, এ কথা বলা যাবে না। আমরা জানি, কী করতে হবে। সকলেই তা জানেন। এল ক্লাসিকোর গুরুত্ব নিয়ে আলাদা বলার কিছু থাকতে পারে না।’
ম্যাচ জিতলে সে ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে যাবে বার্সেলোনা। যদিও দুটো দলই ভালো জায়গায় নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে বার্সেলোনা নেপলসে ড্র করেছে। রিয়াল মাদ্রিদ এ সপ্তাহেই ঘরের মাঠে হেরে গেছে। এল ক্লাসিকো ঘিরে তাই অস্তীত্বের সঙ্কট দুই দলের।
বার্সা কোচ সেতিয়েনের কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথম এল ক্লাসিকো। আর্নেস্তো ভালবার্দেকে সরিয়ে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সুদিন ফেরেনি বার্সার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে লিওনেল মেসি বলেছিলেন, ‘আমাদের টিম ভালো অবস্থায় নেই। দলের ফুটবলারদের চোট-আঘাত রয়েছে। এছাড়া দলও কিছুটা ছন্নছাড়া।’
ম্যাচে মেসির কথাগুলোর প্রমাণ মিলেছে। লুইস সুয়ারেজের চোট দলকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। ডেম্বেলেও চোটের তালিকায়। ফলে বার্সালোনাকেও ভাবতে হচ্ছে ম্যাচ নিয়ে।
জিদানের মতো সেতিয়েনও টলমলে অবস্থায়। লা লিগায় দুই পয়েন্ট শীর্ষে রয়েছে বার্সা। রোববারের এল ক্লাসিকো জিতলে লা লিগা কার্যত পকেটে। তাই সেতিয়েন নিজেকে নিয়েও চিন্তায়। তবে এল ক্লাসিকোতে কোনো কোচই পরীক্ষা-নিরীক্ষার রাস্তায় হাঁটতে রাজি নন। তাই দলের প্রথম একাদশ নিয়ে ভাবার কোনও সুযোগ নেই।
বার্সার স্বস্তি, জর্দি আলবা চোট কাটিয়ে ফিরে এসেছেন। জেরার্ড পিকের চোট মারাত্মক নয়। নাপোলির বিরুদ্ধে তিনি ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন। নেই সুয়ারেজ ও ডেম্বেলে। সেখানে আনসু ফাতি ও ব্রেথওয়েট খেলবেন। লিওনেল মেসি তো আছেনই।
সেতিয়েনের কথায়, ‘এই ম্যাচের গুরুত্ব বোঝানোর কিছু নেই। আমরা জিতলে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে যাব, রিয়ালের চেয়ে। সমর্থকরা খুশি হবেন; কিন্তু জানি, ব্যাপারটা এত সোজা নয়। অতীতের যাবতীয় ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আশা করি, তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরব।’
রিয়াল নিয়ে বার্সা কোচ আগাম কোনও মন্তব্য করেননি। সেতিয়েন বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষকে নিয়ে হোমওয়ার্ক করা হয়ে গেছে। শুধু মাঠে নেমে পারফর্ম করতে হবে। সে কথাই দলের ফুটবলারদের বারবার বলেছি। এমন পরিস্থিতিতে রিয়াল সবসময় ভয়ঙ্কর।’
এল ক্লাসিকোর আগে এই ম্যাচ নিয়ে মন্তব্য করেছেন সাবেক রিয়াল তারকা জর্জ ভালদানো। তার কথায়, ‘চলতি মৌসুমে দুটো দলের অবস্থা একেবারে সুবিধের নয়। একের পর এক ব্যর্থতা সঙ্গী। ফলে এল ক্লাসিকোতে দারুণ ম্যাচ হবে, একথা ভাবার কোনও কারণ নেই।’