বাংলাদেশের বিশাল সমূদ্র সম্পদ নানা কারণে আজ হুমকির সম্মুখিন। অথচ তুমুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এই খাতে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে নজর একেবারে নেই বললেই চলে।
যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা গেলে দেশের উন্নয়নের বড় উৎস হতে পারে সমুদ্র। শুধুমাত্র সমুদ্র কেন্দ্রিক পর্যটনকে তুলে ধরে বিশ্বের দরবারে দারুণ অবস্থান করে নিতে পারে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে উন্নত হতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলও। এ জন্য প্রয়োজন পরিবেশের ক্ষতি না করে পর্যটন সম্প্রসারণে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
১১ ফেব্রয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর সেঞ্চুরি সেন্টার মিলনায়তনে পরিবেশ ও পর্যটন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।
পর্যটন সম্ভাবনা বিকাশে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সমুদ্র পর্যটন উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যাক্সপ্লোরারস অ্যাসোসিয়েশন, সেভ আওয়ার সি (এসওএস) এবং মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক।
সংগঠনের পরিচালক (মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন) কেফায়েত শাকিলের সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যাক্সপ্লোরারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর।
সভায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ট্রাভেল রাইটার মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হলে আগে জানতে হবে পর্যটন কি? স্থানীয় পরিবেশ কিংবা সংস্কৃতি পরিবর্তন ঘটিয়ে কখনো পর্যটন হতে পারে না। আমাদের পর্যটনকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হলে নিজস্ব পরিবেশ ও সংস্কৃতির মাধ্যমেই অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদা হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি পর্যটন সম্পৃক্তদের আন্তরিকতা প্রয়োজন।’
বিশ্ব পর্যটনব্যবস্থার উদাহারন টেনে পর্যটন সম্প্রসারণে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় গুরুত্ব দিতেও বলেন তিনি।
সমুদ্র বিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বাংলাদের সমুদ্র উপকূলের নানা সংকট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও সমুদ্রের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয় খুব কম। অথচ শুধুমাত্র সমুদ্রকে ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশেষ করে সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করা যায়। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ।’
মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেল বলেন, বিশ্বের দরবারে যে কোনো দেশকে পরিচিত করতে টুরিজম হচ্ছে বড় মাধ্যম। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে টুরিজমকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে এই টুরিজম হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। এ জন্য দেশে এখন যারা সমুদ্র, পরিবেশ এবং টুরিজম নিয়ে কাজ করে তাদের আরও সচেতন হতে হবে।
আলাদা সমুদ্র মন্ত্রনালয়য়ের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমুদ্র বিজয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি মন্ত্রনালয় সমুদ্র নিয়ে কাজ করছে। ফলে মন্ত্রনালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে কোনো কাজই সামনে এগুচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি ও সমুদ্র প্রতিবেশ ধরে রাখার স্বার্থে আলাদা সমুদ্র মন্ত্রনালয়ের প্রয়োজন।’
সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম সাগর বলেন, পর্যটন ব্যবসার স্বার্থেরই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস অ্যাসোসিয়েশন চায় পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে টেকশই পর্যটন নিশ্চিত করতে। এ কাজে পরিবেশ কর্মী ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিটিইএ’র উপদেষ্টা এম জি আর নাছির মজুমদার, পরিচালক (অপারেশান) কিশোর রায়হান, পরিচালক (রিসার্চ) শাহরিয়ার হোসেন, মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের সহসভাপতি কাওছারা চৌধুরী কুমু, কার্যনির্বাহী সদস্য আনিসুল হক এবং সেভ আওয়ার সি’র সদস্য আক্তারুজ্জামান।