
দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উদ্যোগে ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড স্পোর্টস ইনজুরি রিহ্যাব ইউনিটের আয়োজনে চবি আইন অনুষদের এ.কে. খান অডিটোরিয়ামে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২৫ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিভিন্ন আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী।
চবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে এবং চবি ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) মোহাম্মদ হোসেন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি নিউরো-ডিসএবিলিটি রিহ্যাব অ্যান্ড স্পোর্টস ফিজিও, ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, এ বছরের বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও মানবকল্যাণে অনুপ্রেরণাদায়ক। বর্তমান বিশ্বে ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে এর বিকল্প ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ফিজিওথেরাপি শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি শাখা নয়, এটি আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেহের নড়াচড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনার পর পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। আজকের এ দিনে আমরা মনে করি, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট মানুষের জীবনে স্বাধীনভাবে চলার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন-যা জীবনের মান উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা শিক্ষা, গবেষণা ও মানবসেবার সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতির সেবায় নিয়োজিত হতে পারেন, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। ফিজিওথেরাপি বিষয়ে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা দেশে-বিদেশে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবদান রাখতে সক্ষম হোক।
উপাচার্য ফিজিওথেরাপি বিষয়ে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আজকের এ দিবস আমাদের সবাইকে সুস্থ জীবনযাপন, শারীরিক সচেতনতা এবং মানবসেবায় নিবেদিত হতে অনুপ্রাণিত করবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবার এক অপরিহার্য অঙ্গ। দুর্ঘটনা-পরবর্তী পুনর্বাসন, শারীরিক অক্ষমতা হ্রাস, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে বিশ্বজুড়ে এ পেশার মর্যাদা ও গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে মানবজাতির ৬০% রোগ নিরাময় হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে।
উপ-উপাচার্য বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা একাডেমিক উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট। ফিজিওথেরাপি বিষয়ক জ্ঞানচর্চা, গবেষণা এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা জাতির স্বাস্থ্য খাতে মূল্যবান অবদান রাখতে পারি। আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখুক- এ প্রত্যাশা করি।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিশেষ করে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অক্ষম বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভোগা রোগীদের জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে এর অবদান অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, এটি শুধু শারীরিক পুনর্বাসন নয়, মানুষের মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনেরও এক কার্যকর মাধ্যম।
উপ-উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা শিক্ষা, গবেষণা এবং মানবসেবার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, ফিজিওথেরাপি বিষয়ক শিক্ষার বিকাশ, একাডেমিক গবেষণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে আমরা সর্বদা উৎসাহিত করবো যেন শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারে। আজকের এ দিবস আমাদের নতুন অঙ্গীকারের প্রেরণা জোগাবে—সুস্থ জীবন ও মানবিক সেবার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আরও শক্তিশালী হবে।
সম্মানিত অতিথি চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী বলেন, আজকের এ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করছি। প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালন করা হয়, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ফিজিওথেরাপি শুধু চিকিৎসার একটি শাখা নয়, বরং এটি মানবিক সেবার এক মহান দিক।
তিনি বলেন, ফিজিওথেরাপি মানুষের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যথা উপশম, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং রোগ প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, স্ট্রোক, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও চিকিৎসকগণ যেভাবে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি বিশ্বাস করি, আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি আরও বেশি কার্যকর ও সহজলভ্য হবে।
চবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, আজকের এ বিশেষ দিনে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অপরিহার্য শাখা। ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক পুনর্বাসন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যবস্থাপনায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে দুর্ঘটনা-পরবর্তী রোগী বা বয়স্ক মানুষের জীবনে স্বাভাবিক চলাফেরা ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সর্বদা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি সেবা সম্প্রসারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আরও উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাবে।
চবি ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ফিজিওথেরাপি কেবল একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া নয়, এটি হলো সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য বিজ্ঞান। শারীরিক অক্ষমতা, ব্যথা ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার আছে, আর সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে ফিজিওথেরাপি কাজ করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে আমি গর্বিত যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে নিয়মিতভাবে এ সেবা দিতে পারছি। আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন, সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন, সেই প্রচেষ্টাতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ বছরের বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস আমাদের নতুন অনুপ্রেরণা দিক, সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাক, সুস্থ জীবনের গুরুত্ব আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা হোক। পরিশেষে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে ফিজিওথেরাপি বিষয়ক গবেষণা ও সেবা সম্প্রসারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে—এটাই প্রত্যাশিত।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আলাওল হলের পেশ ইমাম মো. হাসানুজ্জামান।