আজ : বৃহস্পতিবার ║ ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বৃহস্পতিবার ║ ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাহালমের জেল খাটায় দায়ী ব্র্যাক ব্যাংক: হাইকোর্ট

দেশচিন্তা ডেস্ক:

বিনা অপরাধে পাটকল শ্রমিক জাহালমকে তিন বছর জেল খাটানোর ঘটনায় বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংককে দায়ী করেছেন হাইকোর্ট। এ জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ১৫ লাখ টাকা দিতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এই টাকা দিতে হবে। ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের মামলায় ঠাকুরগাঁওয়ের সালেকের পরিবর্তে টাঙ্গাইলের জাহালমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দুদককেও সতর্ক করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার বিচারপতি এফআর নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এই রায় দেন।

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর তদন্ত করে দুদক বলে, জালিয়াতচক্র।

সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই ১৮টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের পরিবর্তে গ্রেপ্তার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। এ কারণে ব্র্যাক ব্যাংককে এই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেন, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো ভুল না পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়নি। তবে দুদককে হাইকোর্ট সতর্ক করে দিয়েছেন, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল, সেগুলোর পুনঃতদন্ত করে দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে জারি করা রুল কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে ৩০ দিনের মধ্যে জাহালমের অনুকূলে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুলভ্রান্তি যাতে না হয়, সে জন্য দুদককে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক।

আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জাকির হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।

নিরপরাধ জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির মামলায় জড়ানো এবং কারাভোগের ঘটনায় তাকে ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না জানতে জারি করা রুলের ওপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে জাহালমের এ দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনার পর আদালত গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন এবং তাকে তাৎক্ষণিক কারামুক্তির নির্দেশ দেন। এতে সেদিন রাতেই তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ