
করোনা মহামারীর কারণে গত পাঁচ দশকের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে কম আর্থিক প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে পূর্ব এশিয়া, চীন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। এ ছাড়া নতুন করে দারিদ্র্যের গ-িতে ঢুকে পড়তে পারে এ অঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি ৮ লাখ মানুষ। গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক এক রিপোর্টে এমন আশঙ্কার বার্তা দিয়েছে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, মহামারীর কারণে গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এশিয়ায় দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন তাদেরও থেকে যেতে হবে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ বছর মাত্র ০.৯ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে পূর্ব এশিয়া, চীন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। যা ১৯৬৭ সালের পর সবচেয়ে কম। তবে সংক্রমণ কমায় ও সরকারি খরচ হ্রাস এবং ভালো রপ্তানির সুযোগে একমাত্র চীনের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ শতাংশ। কিন্তু অবশিষ্ট অঞ্চলের অর্থনীতি সম্ভবত ৩.৫ শতাংশ সংকুচিত হতে চলেছে। মূলত মহামারীর প্রকোপ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ লকডাউন, আমদানি-রপ্তানি স্থগিতসহ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল তারই মিলিত প্রভাব পড়ছে গোটা অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সামাজিক প্রকল্পের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ এর সুবিধা পেলে অর্থনীতির প্রতি আস্থা বাড়বে শ্রমিক ও কর্মীদের। বস্তুত করোনার আগে থেকেই যেসব দেশ সামাজিক প্রকল্প এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পেরেছে, তাদের দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতেও সুবিধা হচ্ছে। পাশাপাশি কর সংগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে আর্থিক সংস্কারেরও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এরই মধ্যে কোভিড-১৯-এর টিকা কিনতে কম আয়ের দেশগুলোর জন্য ১২শ’ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা এ তহবিলের অর্থ ছাড়ের জন্য তাদের বোর্ড অব ডিরেক্টরদের জানিয়েছে। তারা খুব দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। আশা করা হচ্ছে, এ তহবিলের মাধ্যমে অন্তত ২০০ কোটি মানুষের কাছে কোভিড-১৯-এর কার্যকর টিকা পৌঁছানো সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে রেকর্ড সাড়ে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক অনুদান পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই তা হলে এমন এক বৈশ্বিক মন্দার মুখোমুখি হব যা দশকের পর দশকের উন্নয়নকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডাকে পুরোপুরি নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।’ কোভিড-১৯ মহামারীকালে ও পরে উন্নয়নে অর্থায়ন নিয়ে এক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে গুতেরেস এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘এ বৈশ্বিক সংকটে দেশগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ১১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু এর সামান্য অংশই বরাদ্দ হয়েছে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে।’ গরিব দেশগুলোর সুবিধার জন্য জি-২০ গ্রুপ ঋণ আদায় স্থগিত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘ প্রধান।
দ্রুত পরীক্ষার জন্য চুক্তি করছে ডব্লিউএইচও গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বহু দেশে এখনো করোনা পরীক্ষার হার কম এবং মৃতের সংখ্যাও নথিভুক্ত হচ্ছে না। ফলে এ সংখ্যাটা আদতে আরও বেশি। তাই কম ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে দ্রুত পরীক্ষা করা যায় সে জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাবট ও এসডি বায়োসেনসর এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির মতে, ওই পরীক্ষায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিটেই কেউ সংক্রমিত কি না জানা যাবে। এ চুক্তি অনুযায়ী, ১৩৩টি দেশে ছয় মাসের বেশি সময় ১২ কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হবে।