আজ : শনিবার ║ ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১৬ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতিকেও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা নিয়ে আসে, সেই জাতিকে কেউ হেয়প্রতিপন্ন করবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো। সেইভাবেই দেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলা গড়তে চাই। আমাদের শিল্পকলা, সাহিত্যকে আরও উন্নত করে শুধু দেশে নয় বিশ্ব দরবারেও পৌঁছে দিতে চাই।’ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বইটির প্রকাশনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনকে তখন নয়াচীন বলা হতো। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটি তখন ওই নামেই পরিচিত ছিল। সে সময় ভাষা আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন, বাংলার ভুখা মানুষের খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিলের আন্দোলন–বঙ্গবন্ধু এসব আন্দোলনের কারণে গ্রেফতার হন। তারপর আর তিনি মুক্তি পাননি। তিনি বায়ান্ন সালে অনশন করেন। বায়ান্ন সালেই তিনি মুক্তি পান। এই ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৮ তারিখে তিনি ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপরেই বায়ান্ন সালে চীনের পিকিংয়ে যে শান্তি সম্মেলন হচ্ছিল, পাকিস্তান থেকে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যায়। সেই প্রতিনিধি দলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আতাউর রহমান, খন্দকার ইলিয়াসসহ কয়েকজন সেখানে যান। সেই শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার সমস্ত বর্ণনা তিনি এই বইতে লিখেছেন। পাশাপাশি যেটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, সেটা হলো এই বইতেই লেখা আছে তিনি প্রথম ওই শান্তি সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই যে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম করেছিলেন।’

সম্মেলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নয়াচীনের আর্থসামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আড়াই বছর কারাগারে বন্দি থাকার পরেও তিনি নয়াচীনে গিয়ে একটি জাতি স্বাধীনতা পাওয়ার পর কীভাবে সরকার গড়ে তুলেছে তা গভীরভাবে দেখেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন, অনুভব করেছেন। পাশাপাশি আমাদের দেশের অর্থাৎ তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষের দুরবস্থার কথাও বলেছেন বইটিতে। আরেকটি খুব বিশেষ দিক আমার নজরে আসে, একজন রাজনৈতিক নেতা অনেক নির্যাতন ভোগ করে সেদেশে গিয়ে সেই নির্যাতনের কথা বলেননি। বরং তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশের ভেতরে যা হচ্ছে হোক। আমরা তো বিদেশে এসে দেশের বদনাম করতে পারি না।” অথচ আমরা এখানে দেখি আমাদের দেশের অনেককে উৎসাহ নিয়ে দেশের বদনাম করতে। এই প্রবণতাটা আমরা দেখি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও সহনশীল এমন একজন নেতা যে, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে বিদেশে গিয়েও বদনাম করেননি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের ভাষা, বাংলাদেশ আমাদের দেশ। এই পরিচয়টা পেয়েছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য। তিনি যখন কারাগারে ছিলেন, তখন আমার মা তাকে খাতা কিনে দিয়ে লিখতে উৎসাহ দিতেন। যেহেতু কারাগারে সেন্সর করে খাতা দেওয়া হতো, তারিখ দিয়ে দেওয়া হতো। সেই তারিখ থেকে জানতে পেরেছি আজ যে বইটার মোড়ক উন্মোচন করা হলো, সেটা সর্বপ্রথমে লেখা।’

বইটিতে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট একটা অ্যালবাম উপহার দিয়েছিলেন। তাতে কিছু ছবি ছিল। পরে আমি যখন ছবি খুঁজছি তখন তারিক সুজাত ছবি ও মনোগ্রাম এনে দিলো। এজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

এবারের অমর একুশের গ্রন্থমেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি উৎসর্গ এবং তাকে নিয়ে বই প্রকাশ করার জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ