দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:
বায়তুশ শরফ আন্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ৪ দিনব্যাপি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদ্যাপন উপলক্ষে “শানে মোস্তফা (সঃ)” নাত ও গজলের আসর ১৯ নভেম্বর ১০ই রবিউল আউয়াল ১৪৪০ হিঃ রোজ সোমবার বাদে মাগরিব বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বায়তুশ শরফের পীর ছাহেব বাহ্রুল উলূম শাহসূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (মঃজিঃআঃ) সভাপতিত্বে ও মজলিসুল উলামা বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুর রশিদ নূরী এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের নজরে আক্বীদাত পেশ করেন- বায়তুশ শরফের পীর ছাহেব বাহ্রুল উলূম শাহসূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (মঃজিঃআঃ)। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন- সমাজ বিনির্মাণ ও বিবর্তনের ক্ষেত্রে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শানে মোস্তফা (স.) এর চর্চা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সুষ্ঠু, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গঠনে যেমন মানবতাবাদী পরিচ্ছন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতি অপরিহার্য, তেমনি মানবতাবিরোধী ও অশ্লিল সাহিত্য-সংস্কৃতি যে কোন সমাজকে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে ঠেলে দেয়। তদুপরি সত্যিকার আল্লাহর বান্দাহর কোন কাজ উদ্দেশ্যহীন হতে পারে না। অশুভ অকল্যাণকর কিংবা গর্হিত কোন কাজের তো প্রশ্নই উঠে না। “শিল্পের জন্যে শিল্প” এই নিরর্থক কুটিল বাক্য একজন সত্যিকার আল্লাহর বান্দাহর জন্য ভারসাম্যহীন ও অশোভনীয়। কেননা বান্দাহর প্রতিটি কাজ তার মা’বুদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নিবেদিত হতে বাধ্য। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায়নের মাধ্যমে মুমিন ঘোষণা করে যে,
“আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু- কেবল বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই উৎসর্গকৃত।” তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) সুস্থ, রুচিকর, সৃজনশীল মানবতাবাদী সাহিত্য সৃষ্টির জন্য নির্দেশ দান করেছেন, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। অপর দিকে মিথ্যা, অশ্লিল, অরুচিকর মানবতা-বিধ্বংসী সাহিত্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং এর রচয়িতাদের নিন্দা করেছেন। তিনি আরো বলেন- আমাদের শিল্প সাহিত্যের উৎসমূলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ই হলেন একমাত্র পথ প্রদর্শক। তাঁর উর্বর, সমৃদ্ধ ও বিজ্ঞান সম্মত সাহিত্য-চিন্তা, যা লালন করা সুস্থ, মানবতাবাদী ও কল্যাণকর সমাজ বিনির্মাণ ও বিবর্তনের খাতিরে প্রত্যেক যুগেই, প্রত্যেক দেশেই, প্রত্যেকের জন্য অতীব প্রয়োজন। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে যে সর্বাত্মক অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য। ঈমানী তেজোদ্দীপ্ত সালিহ-মুত্তাকীদেরকেও যথাযথ ভাবে উপলব্ধি করে স্বীয় দায়িত্ব পালনে যতœবান হওয়া আবশ্যক। এ দায়িত্ব পালন নিঃসন্দেহে জিহাদের সমতুল্য। কবি হাস্সান, কা’ব ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহ (রা.) প্রমুখ এ জিহাদী দায়িত্বই পালন করে গেছেন, আর এ ক্ষেত্রে রেখে গেছেন এক বর্ণাঢ্য, স্বর্ণোজ্জ্বল ঐতিহ্য।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মোহাম্মদ শামসুল আলম, প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন-মদিনা কেন্দ্রিক ইসলামি সাহিত্যের যে যাত্রা শুরু হয়, তা ইসলামি দাওয়াতের সাথে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের যে কোন ভাষার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের কবি-সাহিত্যিকরা তাদের প্রতিভাকে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। এভাবে ইসলামি সাহিত্যও আন্তর্জাাতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইসলামের অব্যবহিত পূর্ব আরবের ভাষা ও সাহিত্যের দারুণ উন্নতি ঘটেছিল। তখন লিখিত গদ্য না থাকলেও মৌখিক গদ্য: বক্তৃতা-ভাষণ ও গল্প কাহিনীর ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। আর জাহেলি আরবদের কাব্য চর্চার খ্যাতিতো বিশ্বব্যাপি। মোট কথা ভাষা-সাহিত্যের সমঝদার অসংখ্য লোকের জন্ম তখন আরবে হয়েছিল। তা না হলে কুরআনের মত এমন উন্নত ভাব ও ভাষাশৈলীর গ্রন্থ তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হত না।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাওলানা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মীর মোহাম্মদ আনোয়ার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আল্হাজ্ব লুৎফুল করিম, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন কমিটি ২০১৮ আহ্বায়ক আলহাজ্ব রফিক আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা ওবাইদুল্লাহ, খতিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা কাজী নাসির উদ্দিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক- মাওলানা আবুল হায়াত মোহাম্মদ তারেক, মাওলানা কাজী জাফর আহমদ, মাসিক দ্বীন দুনিয়ার সম্পাদক- আলহাজ্ব মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ, হাফেজ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, মাওলানা আব্দুল হাই নদভী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন মুহাম্মদ বেলাল, মাওলানা হাফেজ নিজাম উদ্দীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, আল্হাজ্ব মিফতাহুল হুদা, হাজী আহমদ হোসাইন, মাওলানা কাজী শিহাব উদ্দীন, মাওলানা আব্দুশ শাকুর, মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা নুরুদ্দীন মাহমুদ প্রমুখ।
শানে মোস্তফা (সঃ) গজলের আসরে দেশে বিদেশের বহু উর্দূ, ফারসী, বাংলা গজলের শায়েরের পদচারণায় বাদ মাগরিব থেকে বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ উৎসব মুখর হয়ে উঠে। শায়েরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা হারুন কাদেরী, মোহাম্মদ জুবায়ের কাদেরী, মাওলানা সাইয়েদ নুর, মাওলানা শব্বির আহমদ, মাওলানা আশরাফ বিহারী, আমীর আলী শরিয়তপুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবু দাউদ শাহ্ শরীফ, শাহেদুল করিম খান, শোয়াইব বিন হাবীব, মাওলানা আবদুন নূর, ইমাদ উদ্দিন সাআদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, আগামীকাল ২০ নভেম্বর রোজ মঙ্গলবার (১) বাংলা কবিতা আবৃত্তি ক) জুনিয়র গ্রুপ সকাল ৯ টায়, খ) সিনিয়র গ্রুপ- সকাল ১০ টায়। (২) না’তে রাসূল স. প্রতিযোগিতা উর্দূ/ফার্সি/আরবী সকাল ১১ টায়। (৩) বাংলা না’তে রাসূল প্রতিযোগিতা ক) জুনিয়র গ্রুপ (অনূর্ধ্ব ১৪ বছর পর্যন্ত) বিকাল ২.১৫ মিনিটে খ) সিনিয়র গ্রুপ (১৪ বছরের উর্ধ্বে) বিকাল ৩.১৫ মিনিটে (৪) পুরস্কার বিতরণ ও ৯ জন হাফেজকে দস্তারবন্দী বাদ আছর (৫) বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, ধনিয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, কদমতলী, সুপারিওয়ালাপাড়া, দেওয়ানহাটসহ স্থানীয় মহল্লাবাসী এবং ডি.টি রোড ব্যবসায়ি সমিতির উদ্দ্যোগে আজিমুশ্ শান ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সর্বস্থরের মুসলিম ভাইদের প্রতি দাওয়াত রহিল।
পরিশেষে বায়তুশ শরফের মাননীয় পীর ছাহেব বাহরুল উলুম শাহসুফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (মঃজিঃআঃ) মাহফিলের সফলতার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।