আজ : শুক্রবার ║ ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শুক্রবার ║ ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ২১শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ আলোচনায় এম এ সবুর বলেন- মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর আধ্যাত্মিক জীবন দর্শন থেকে আমাদের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে হবে

দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের উদ্যোগে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতমনেতা, মুসলমান সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, এদেশের অরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা, কদমমোবারক মুসলিম এতিমখানাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, খ্যাতিমান মনিষী, মাওলানা ইসলামাবাদীর ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী এক স্মরণ আলোচনা সভা সংগঠনের আহবায়ক বাবুল কান্তি দাশের সভাপতিত্বে ২২ অক্টোবর সংগঠনের আন্দরকিল্লাস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক কালাম চৌধুরী। প্রধান আলোচক হিসেবে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও সমাজসেবক এম.এ. সবুর। বিশেষ আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী, প্রাবন্ধিক ছিদ্দিকুল ইসলাম। আসিফ ইকবালের পরিচালনায় এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত শিক্ষাবিদ অজিত কুমার শীল, মোঃ সরওয়ার আলম, আবৃত্তিশিল্পী শবনম ফেরদৌসী, কবি সজল, দক্ষিণজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগনেতা সালাউদ্দীন লিটন, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল হুদা চৌধুরী, লেখক নাছির হোসাইন জীবন, সংগঠক আতিকুর রহমান আতিক, নোমান উল্লাহ বাহার, ছাত্রনেতা বোরহান উদ্দীন গিফারী, মাওলানা কে.এইচ.এম তারেক, সাইফুদ্দীন খালেদ, শিক্ষক সুমন চৌধুরী, মোঃ ইয়াছিন সামির, হানিফ হোসেন, জুনায়েত উদ্দিন নাঈম, সৈয়দ আরমান প্রমুখ। দোয়া ও মুনাজাত করেন মাওলানা কে.এইচ.এম তারেক। সভায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন একজন অস্প্রাদায়িক চেতনার নেতা। যিনি আজীবন মেহনতি মানুষের নেতৃত্ব এবং কাজ করে গিয়েছেন। যার প্রতিষ্ঠিত কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মুল লক্ষ্য ছিল এতিমদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যিনি আজীবন মানবতার কল্যাণে রাজনীতি ও সমাজসেবা করে গেছেন। একজন গুণী মনীষি হিসেবে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী অনেক প্রতিভাসম্পন্ন দুরদর্শী নেতা ছিলেন। তিনি বলেন মাওলানা ইসলামাবাদী তার আধ্যাতিœক চিন্তায় ছিল যে আন্দোলন, সংগ্রাম আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মদিয়েছি তা বেশিদিন ঠিকবেনা। মাওলানা মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সৃষ্টির মাধ্যমে কথাটি যথার্থরুপ পেল। প্রধান আলোচক তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন- মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী একধারে ৩টি দেশের নাগরিক ও নেতৃত্ব দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ব্রিটিশ, ভারত এবং পাকিস্তান। তিনি বলেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন একজন বিরল প্রতিভা আর পন্ডিততুল্য নেতৃত্ব।
১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রামের কদমমোবারক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ সময়ে তিনি কংগ্রেসের অহিংস নীতির প্রতি আস্থা হারান এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি সমর্থন দান করে ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন। তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগদান ও আজাদ হিন্দ ফৌজের কার্যক্রমের প্রতি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করা। সে সময় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিপ্লবী কেন্দ্র স্থাপন করেন। নেতাজী যখন আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উড়িয়ে ‘দিল্লি চলো’ শ্লোগান তুলে এগিয়ে চলছিলেন ভারতের দিকে ঐ সময় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সাথে পরিচয় ঘটে বেংগল ভলান্টিয়ার্স এর সুবোধ চক্রবর্তীর। সুবোধের সাথে আলাপ করে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এত বেশি মুগ্ধ হন যে শেষ বয়সে একটা ঝুঁকি নেবার জন্য রাজি হয়ে পড়েছিলেন। সুবোধকে সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে আসেন চট্টগ্রামের দেয়াঙ পাহাড়ে। চট্টগ্রামের পাহাড়-পর্বত ডিঙ্গিয়ে আরাকানের পথ ধরে আবারও নেতাজীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে যখন পথ চলছিলেন তখন সীমান্ত এলাকায় ছিল সতর্ক পাহারা। আজাদ হিন্দ ফৌজ দখলে থাকার কারণে সতর্কতা যেন সীমাহীন হয়ে পড়েছিল। মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বীরকণ্ঠে তার সহচরকে বলছিলেন, আমার জীবনের মাত্র কয়েকদিন বাকি, এই চরম ঝুঁকি নিতে আমার অসুবিধেও নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিলেন, শ্যালক মোর্শেদকে নিয়ে একেবারে ফকির সেজে নেতাজীর সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন। ব্রিটিশ গুপ্তচরেরা তখন মওলানার সমস্ত বিপ্লবী কার্য টের পায়। সে কারণে তার শহরস্থ বাড়ি, তৎকালীন পটিয়ার (বর্তমান চন্দনাইশ) বাড়ি, সীতাকুন্ডের বাড়ি, কলকাতার বাসভবনে ইংরেজ সার্জেন্টের নেতৃত্বে বিপুল সৈন্যের মাধ্যমে তল্লাশি চালানো হয়। ঐ সময় মওলানাকে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধী, প-িত জওহরলাল নেহরু প্রভৃতি নেতার সাথে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীকেও দিল্লির লালকিল্লায় বন্দী করে রাখেন। অতঃপর তাঁকে সেখান থেকে পাঞ্জাবের ময়াওয়ালী জেলে স্থানান্তর করেন। সেখানকার জেলের ছাদের বিমের সঙ্গে রজ্জু দিয়ে ৬৫ বছর বয়স্ক মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর দু’পা বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে তাঁর উপর অশেষ নির্যাতন চালানো হয়েছিল গোপন তথ্য জানার জন্য।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ