আজ : শনিবার ║ ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

চকরিয়ায় মা-মেয়েকে নির্যাতন: ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দেশচিন্তা ‘ অনলাইন : কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগ এনে বয়স্ক মা ও তরুণী দুই মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছিল হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনায় এবার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে চকরিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতিত পারভিন বেগম। মামলায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত ও মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদী।
ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)। এ তিনজনকে গতকাল সোমবার আটক করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন বেগম। ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তারা রাঙ্গনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তারা সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তির হাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বাস করেন। গত ২১ আগস্ট দুপুরে ওই ভাড়াবাসা থেকে পারভিন বেগম, তার ছেলে এমরান, ছেলের বন্ধু ছুট্টু, দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে, চকরিয়া উপজেলার হায়দার নাশি এলাকায়, ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তারা প্রথমে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানি হাটে আসেন। তারপর সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত বেবি ট্যাক্সি নেন। সেটায় চড়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারার পূর্ব পাশে হায়দারনাশিস্থ ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও রওনা দেন।
তারা সিএনজি বেবি ট্যাক্সি করে চকরিয়ার হারবাং লাল ব্রিজ নামক এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক তাদেরকে ধাওয়া দিতে দেখেন। এতে সিএনজি চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহর চাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদেরকে আটক করে। তারপর কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় ওই অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে নেয়। এরপর তাদেরকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় হাঁটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।
ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলাম তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। এরপর প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারে। এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকে। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

মামলায় পারভিন বেগম আরও উল্লেখ করেন, গরু চুরির ঘটনা মিথ্যা ও অপবাদ। তাদেরকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এছাড়া কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। যা চরমভাবে মানহানিকর। এটি পূর্ব পরিকল্পিত।

এদিকে, মামলার আসামিদের মধ্যে গত ২৪ আগস্ট ভোর রাতে নাছির উদ্দিন (২৮), নজরুল ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদেরকে ওই দিনই চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেওয়া হয়। পরে শুনানি শেষে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব।
মামলা বাদী পারভিন বেগমের আইনজীবী ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবেন।
চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এদিকে চকরিয়ার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিনারুল ইসলামের, তিনি এ ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিল। তবে তিনি মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে জানতে পারে। গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগিতা করেছে।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ