
ফাইল ছবি
দেশচিন্তা‘ অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার তিন বছর পার হলেও তাদের প্রত্যাবাসনে কোনো গতি নেই। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে আছে। করোনা সংকটে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনায়ও কোনো গতি নেই। তাই কবে থেকে আবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা এখনই কেউ বলতে পারছেন না।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এরপর গত তিন বছরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এই কমিটি কয়েক দফা বৈঠকের পরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর সামনে এগোতে পারেনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী একই বছর ১৯ ডিসেম্বর মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চার দফায় এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১০ হাজার রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই করেছে মিয়ানমার। সর্বশেষ চলতি বছর ১৮ মার্চ মিয়ানমারের কাছে চার লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হয়। সেই তালিকা হস্তান্তরের পর করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে চার দফায় রোহিঙ্গা তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেওয়া হলেও সে প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে এই তালিকা দ্রুত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাগিদ দেওয়া হলেও তারা করেনি।
করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এই সময়ে এক দিকে যেমন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে তাদের সুরক্ষা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘন বসতির কারণে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে, চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার। আরাকান বিদ্রোহীদের দমনে এই অভিযান পরিচালনা করছে দেশটি। বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যে আরাকানের ১০ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একেবারেই থেমে গেছে। করোনা ভাইরাস রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআর।
রোহিঙ্গা সংকটের তিন বছর পূর্তিতে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, তিন বছর পরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে ও নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিকে করেছে আরও জটিল। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত পরিবর্তী পরিস্থিতির নতুন চাহিদাগুলো মেটানো এবং এই সংকট সমাধানের লক্ষ্যে আরও বেশি কাজ চালিয়ে যাওয়া।
করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি জানান, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ধীরগতি হয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর আবারও এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে সোমবার (২৪ আগস্ট) এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আত্মীকরণের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাই নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।