
বৃটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে কখনো ভাষার দাবী ওঠেনি। তখনো উর্দূ, ফার্সী, হিন্দী, বাংলা, মারাঠি, তামিল, অসমীয় ভাষাসহ একুশটি ভাষা সমতালে ব্যবহার হতো। রাজ্য ভেদে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাষা মিলে প্রায় ২৯টি ভাষার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ইংরেজি ছিল সরকারী ভাষা। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় চার প্রজন্মের আত্মত্যাগের পর দুইশত বছরের গোলামীর জিঞ্জির ছিঁড়ে যখন পাকিস্তান এবং ভারত স্বাধীনতা লাভ করে তার পরেই আসে এই পাকিস্তানে উর্দূ ভাষাভাষিদের দাপট। সে দাপটের বিরুদ্ধে জেগে উঠা বাংলা ভাষাভাষিদের অনিবার্য হয়ে ওঠে। আমরা ১৯৮৪ হতে ১৯৫২ পর্যন্ত ভাষার আন্দোলন করেছি। এখনো সে আন্দোলনের যৌক্তিকতা শেষ হয়ে যায়নি । যদিও জাতিসংঘে আমাদের গৌরবান্বিত সূর্যসন্তান শহীদ ভাষা সৈনিকগণের রক্তের স্বীকৃতি মিলেছে। দেশচিন্তার আয়োজনে আয়োজনে ১৫ ফাল্গুন (২৮ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুর নাহার মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক ও গবেষক মোস্তফা নুর এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন,২১ ফ্রেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা আজো হয়ে ওঠেনি। আমাদের রাষ্ট্র চাকরদের ভাষা এবং উচ্চ আদালতসহ উচ্চ মার্গবাদীদের ভাষায় বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ফোটে না। আমাদের উপর এখন হিন্দী এবং ইংরেজির অশ্লীল আগ্রাসন চলছে। মিডিয়া সংস্কৃতির অপরিনামদর্শীতায় আক্রান্ত ভাষা শহীদদের রক্তে রঞ্জিত বাংলা ভাষা। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরো দায়িত্বশীল হয়ে ভাষা সংগ্রামের প্রকৃত সফলতা অর্জনে ভূমিকা নিতে হবে।
আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বাংলা লিখনে, বাক্যগঠনে ভুল থাকাটা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি। আমাদের শিক্ষকগণের বাচিকতায় এবং শিক্ষালয়ের প্রকাশনায় নানান ভুলে ভরা কর্মকাণ্ড এখনো বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞজনদেরকে ভীষণ দুঃখ দেয়”।
দেশচিন্তা সম্পাদক লেখক ইমরান সোহেলের পরিচালনায় ও ট্রাস্ট অব হিউম্যান রাইটস্ বাংলাদেশ এর মহাসচিব ও লেখক আবদুল্লাহ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ছিলেন রাজনীতিবিদ ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ওমর ফারুক, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ওচমান জাহাঙ্গীর, কবিও কথাসাহিত্যিক আল জাবিরী, লেখক সাংবাদিক আলমগীর রানা।
অনুষ্ঠিত সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউনিলিভারের সাবেক ব্যবস্থাপক কবি মাদল বড়ুয়া, কবি নুর নাহার নিপা, জুবাইর বিন জিহাদী, শবনম ফেরদৌসি, শাহিন ফেরদৌসি ও মানবাধিকার কর্মী আইভি আহমেদ রিয়া প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে মাতৃভাষা বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ ছাড়াও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখায় লেখক,সাংবাদিক আলমগীর রানা ও লেখালেখির জন্য কথাসাহিত্যিক আল জাবিরীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।