ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ জান্নাতুল ফেরদৌস মহিলা মাদ্রাসার হোস্টেলের সিঁড়ির ঘর থেকে আছমা আক্তার আমেনা (১১) নামে এক শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। সে ওই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
পরিবারের দাবি, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছেন। পরে ঘটনায় জরিত থাকতে পারেন—সন্দেহে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাসহ চার জন শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত আমেনা পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের প্রবাসী মুমিনুল হকের মেয়ে। সে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতো। ঘটনার দিন দুপুরে খাবারের পর বিকালে ঘুমানোর কথা ছিল আমেনার। রুমে না থাকায় তার সহপাঠীরা খুঁজতে সিঁড়ির রুমে যায়। এ সময় তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে তারা। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাকে দায়ী করে মিছিল করেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ঘটনার পর নিহত শিক্ষার্থী আমেনার মা সেলিনা বেগম বাদী হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ৬ জনকে আসামি করে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মালায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম মোস্তফা এবং সহকারী শিক্ষক আল আমিন, আনোয়ার হোসেন ও হাফেজ ইউনুস মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। সেলিনা বেগম অভিযোগ করেন, তার মেয়ে গলায় ফাঁস দেয়নি, হত্যা করে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রণজিৎ রায় বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বলা যাবে, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এরপর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই দিন রাতেই অভিভাবকরা তড়িঘড়ি করে তাদের সন্তানদের হোস্টেল থেকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এরপর থেকে মাদ্রাসাটি বন্ধ রয়েছে।