আজ : শুক্রবার ║ ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শুক্রবার ║ ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ২১শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে ক্লাসিক্যাল তবলা স্টুডেন্টস ফোরামের অনবদ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ‘পঞ্চসুর’

দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:

তবলা তথা শাস্ত্রীয় সংগীতের নানা অনুসঙ্গের নিয়মিত চর্চা, প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গত এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে পথ চলার শুভ সূচনা করে ‘ক্লাসিক্যাল তবলা স্টুডেন্টস ফোরাম, চট্টগ্রাম।’ নীরবে-নিভৃতে পুরো এক বছর কার্যক্রম অব্যাহত রেখে নিজেদের পুরোপুরি সংগঠিত করার পর সম্প্রতি নগরীর নন্দনকানন ফুলাকির এ কে খান মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় সংগঠনের উদ্বোধনী তথা আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। বাহুল্য প্রচারে অভ্যস্ত হালের ভূঁইফুর প্যাডসর্বস্ব সংগঠনের জন্যে এটি একটি শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই বটে। কতিপয় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘটা করে শুরু করে হজুগে বাঙ্গালির গড়া সংগঠনের ব্যানারে কয়েকদিন বা কয়েক মাস নিউজসর্বস্ব অনুষ্ঠান আয়োজন শেষে তল্পীতল্পা গুটিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে দেখা যায় অধিকাংশদের। এ ক্ষেত্রে ‘ক্লাসিক্যাল তবলা স্টুডেন্টস ফোরাম’কে ব্যতিক্রমী তালিকাভূক্ত করতে চাই আমরা। আশা করি, এ সংগঠন এর মর্যাদা রক্ষায় নিষ্ঠাবান থাকবে। সন্ধে সাড়ে ৬টায় পর্দা উঠে মঞ্চের। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রাবন্ধিক সরস উপস্থাপক মোঃ সঞ্জিত আলমের সঞ্চালনায় বাঙালির চিরায়ত মাটির প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রবীণ তবলা গুরু উস্তাদ কিরন্ময় চৌধুরী। প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক আবুল হোসেন ও বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী চট্টগ্রাম এর জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নারগীস সুলতানা সংগঠনের শুভ কামনা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, সংস্কৃতি সমাজের অন্ধকার দূর করে সমাজকে আলোর পথে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়। সংগীতে শেষ বলে কিছু নেই। অবিরত চর্চায় সংগীতে অনেকাংশে পারফেকশান আনা সম্ভব, তবে শতভাগ পারফেকশনের জন্যে যুগের পর যুগ সাধনা করে যেতে হয়। গুরুমুখী এ শিল্প চর্চায় গুরু-শিষ্যের মেলবন্ধন যত দৃঢ় হয়, সংগীতে উত্তরনের পথও তত প্রশস্থ হয়। অনিয়মিত বা নিষ্ঠার অভাব হলে সংগীতে ঋদ্ধ হয়ে ওঠা মোটেও সম্ভব হয় না। অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সংগঠন এর সদস্য মুন্নী বড়–য়া, অনামিকা বৈষ্ণব, নিলান্তী চৌধুরী ও পুষ্পিতা ঘোষ। উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে সভাপতির দায় পালন করেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তবলা শিল্পী পলাশ দেব। অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তির দূত নোবেল বিজয়ী মাদার তেরসার প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তবলা, কি বোর্ড, গিটার ও বেহালার বৃন্দ বাদনের মাধ্যমে রবি ঠাকুরের গান ‘আনন্দালোকে মঙ্গঁলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ এর সুর বাজিয়ে শোনায় ফোরামের সদস্য/সদস্যাবৃন্দ উদ্বোধনী প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পাশাপাশি। পলাশ দেবের পরিচালনায় এ বৃন্দ বাদনে কি বোর্ডে তপন আচার্য্য, বেহালায় আশীষ বসাক, গিটারে জারিফ শাবাব এবং তবলায় অনুজা, অর্পিতা, শৈবাল, সুজয়, নিলয়, স্বস্থি , জিতাদিত্য, দেবাঙ্গন, প্রতীক, প্রীতম, সৌম্য, অনিন্দ্য, জয়, প্রত্যয়, স্বপ্নীল, শ্রেষ্ঠ, প্রবাল, বর্ণ, অভিজ্ঞান, যুবরাজ, নির্ঝর, অন্তর, অর্ক, পুষ্পা, কাব্য, কৌশিক, সালনাম, সমুদ্র, প্রলয়, অম্লান, অমিত, ইন্দ্রনীল প্রমুখ অংশ গ্রহণ করেন। এক কথায় অপূর্ব ছিল এ কম্পোজিশান। একক শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগ বেহাগ পরিবেশন করে বর্তমান প্রজন্মের নন্দিত কন্ঠ ও তবলা শিল্পী প্রত্যয় বড়–য়া অভি। অভির পরিবেশনায় যথেষ্ঠ মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী প্রকাশ বড়–য়ার সুযোগ্য সন্তান অভি যে শতভাগ তার চর্চায় নিবেদিত তা সে তার পরিবেশনায় ফুটিয়ে তুলেছে। মুগ্ধ শ্রোতা মুহুর্মুহু করতালিতে অভিকে অভিনন্দন জানতে ভুল করেননি। সুরের সাগরে অভি সাবলিলভাবে প্রতিনিয়ত অবগাহন করুক, তার সংগীত সাধনা অব্যাহত থাকুক-এ দৃঢ় প্রত্যাশা আমাদের। শিল্পীকে তবলায় সানি দে, হারমোনিয়ামে আল ইমরান ও তানপুরায় সম্পদ বড়–য়া সহযোগিতা করেন। একক তবলা লহড়ায় পরপর তিনবার জাতীয় পুরস্কারবিজয়ী অনয় চক্রবর্তী তার অনবদ্য বাদনে শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করে। তবলা লহড়ায় নিলয় মল্লিকও ছিল যথেষ্ট সাবলিল। শিল্পীদের হারমোনিয়ামে তাদের গুরু পলাশ দেব, কি বোর্ডে তপন আচার্য্য ও বেহালায় আশীষ বসাক সহযোগিতা করেন। সংগঠন সদস্য অনয় চক্রবর্তী জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিতে অর্পিতা ঘোষ বেতারে সংগীতশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এবং জিতাদিত্য বড়–য়া সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অসামান্য ভূমিকা রাখায় সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল অভিনন্দন জানানো হয়। জনপ্রিয় লোকগান ‘গাড়ি চলেনা, চলেনা চলেনারে’ ও ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণ নাথ আসিতে পারে’ এর সুর সমবেত তবলা, কি বোর্ড, বেহালা, হারমোনিয়াম ও গিটারের মাধ্যমে পরিবেশনের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়া হয় সবশেষে। পিন-পতন নিরবতায় মিলনায়তন উপ্চে পড়া শ্রোতা ভালো লাগার আবেশ হৃদয়ে ধারণ করে ঘরে ফিরে যান। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, গোছানো এবং নিটোল এ আয়োজনের স্মৃতি সেদিনের উপস্থিত শ্রোতাদের র্দীঘদিন নস্টালজিক করবে। অভিবাদন ‘ক্লাসিক্যাল তবলা স্টুডেন্টস ফোরাম’ এর সংশ্লিষ্ট সকল শিল্পী-কলাকুশলীদের। অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত রঙিন দৃষ্টিনন্দন ফোল্ডারের প্রশংসা না করে পারা যায়না। পরিশেষে সংগঠনের র্দীঘ পথ চলা প্রত্যাশা করছি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ