আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বৃহস্পতিবার ║ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির উত্থান ও পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি

দেশচিন্তা ডেস্ক:

সুব্রত আপন

যদি রাজনীতির কথা আসে তবে বলতে হয় স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে সেনাশাসন, বহুদলীয় গণতন্ত্র, একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসন, বহুদলীয় ব্যবস্থায় বেসামরিক শাসন এর ছদ্মবেশে সেনাশাসন এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাঙালি দেখে এসেছে। তৎমধ্যে আবার বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সুবিধার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল যদিও তা আওয়ামীলীগের শাসন ব্যবস্থার বদৌলতে এখন সাংবিধানিকভাবে তা বিলুপ্ত। বহির্বিশ্বের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের সাথে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বেশ ভিন্ন। স্পষ্ট করে বলা চলে, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২-৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মোড় ঘুরেছে বহুবার। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন অনেকটা পরিবার কেন্দ্রিক। কার বাবা কি করেছে, কার স্বামী কি করেছে, কার দাদার কি অবদান ছিল এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি শুধু সরকার গঠন করা বড় দু’দলের মধ্যে বিদ্যমান নয়। এটি গ্রাম গঞ্জে শহর নগরে ছড়িয়েছে পড়েছে ব্যধির মতো। মেম্বার, চেয়ারমান, এমপি থেকে শুরু করে প্রত্যেক স্তরে এর প্রভাব পড়েছে খুব ঘাড় ভাবেই। এক ধরনের পুঁজিবাদী এলিট শ্রেণীর মানুষ এ রাজনীতিকে ব্যবসায়িক হাতিয়ার বানানোর ফলে রাজনীতি এখন পলিটিক্যাল বিজনেসে পরিণত হয়েছে। যাকে আমরা পিতৃতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বলতে পারি। এই পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি চলমান থাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদকে দলীয়করণ, ব্যক্তি কেন্দ্রিক সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটপাট এখন নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় অনায়াসে। রাজনৈতিক নামের ব্যবসায়ীরা দেশের হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশের সেকেন্ড হোম বানায়।

কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিষয়বস্তু শুরু করার আগে ঘুরে আসি গণতন্ত্রের বারান্দা থেকে। একটু বোঝার চেষ্টা করি গণতন্ত্র আসলে কি, গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা কেন। গণতন্ত্র বলতে আমরা যা বুঝি, কোনও জাতি রাষ্ট্রের অথবা কোনও সংগঠনের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রকে ইংরেজিতে বলে Democracy, যা জনগণের জন্য শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায়। নানাবিধ আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে। এই অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেয়া হয়। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমেরিকার সাবেক সফল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন ‘Government of the people, by the people, for the people.’ গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগের অংশ নেওয়ার অধিকারী তাই গণতন্ত্র। কিন্তু টানা তিনবারের চেয়ারে ক্ষমতাসীন থাকা আওয়ামীলীগের শাসনামলে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামীলীগের সরকারের গোলামী করেছে এবং একচ্ছত্রভাবে সংবিধানে ঘষামাজা করা সরকারের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিল। ফলে অহরহ বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড, ধর্ষন, লুটপাট, ধমনপীড়নের রাজনীতি অব্যহত রাখে। সবকিছুই ছিল নির্বাহী ক্ষমতার অধীনে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, রোশনালে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের মত স্বাধীন অফিসও। দেশে এতো কিছু হওয়ার পরেও আওয়ামীলীগ সরকার দায়বদ্ধতা এড়িয়ে—জনগণের কাছে দেয়নি জবাবদিহিতা, যাচাই প্রতিবাদ করেছে সে হয়েছে বলিরপাঠা কিংবা আয়নাঘরের কয়েদী। অথচ সংবিধানে সুষ্পষ্ট ভাবে আছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, জনগণই দেশের মালিক। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণকে মালিকের বদৌলতে পরিনত করেছিল গোলামে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা মানুষকে এতোটাই জিম্মি করে রেখেছিল যে, মানুষ অনেকটা মাইনকার চিপায় পড়ার অবস্থায়। জনগণ না পেরেছে গিলতে, না না পেরেছে ফেলে দিতে। এক দশকের বেশী সময় ধরে গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীনদের অনাগ্রহ খুবই স্পষ্ট ছিল। তারা গণমানুষের অধিকার, কথা বলার অধিকার, ভোটাধিকার, সাংবাদিক হত্যা, গণমানুষ সহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে মামলা, বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড, গুম, বিরোধী দল দমন পিড়ন, নামে বেনামে মামলা, আইন শৃংখলা বাহিনীতে দলের স্বার্থে ব্যবহার, দেশীয় টাকা পাচাঁর সব মিলিয়ে বুঝা গেছিল যে, আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের পথে না হেটে স্বৈরাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে হাতিয়ার বানিয়েছে ক্ষমতাকে আকড়ে ধরে। গত ২০১৩ সালের নির্বাচন ও এর আগের ২০১৮ সালের নির্বাচনে শুধু সততাকে বিসর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তা না নয় বল প্রয়োগ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুকে পড়েছে। যদি জিমিয়ে পড়া বিবেককে একটু ঝাকুনি দিই তাহলে বুঝতে পারবো এ দেশে বর্তমানেও গণতন্ত্রকে লালন করছেই না, বরংচ গণতন্ত্রে ফলস্ফুত ভাবে বিকাশের চেষ্টাই নেই। এখন যে বৈষম্য বিরোধীয় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ একটি ফাসিবাদ মুক্ত, স্বৈরাচার মুক্ত দেশ পেলে কাটেনি সে বৈষষ্য। সমন্বয় ও নেতার যে যার যার মতো জুলাই আন্দোলনের চেতনা বিক্রয় করে লুটপাট, যে কোন মানুষকে ফাসিয়ে দিচ্ছে, মারধর করছে, লুটপাট করছে, চাদবাজি করছে, সর্বোপরী মব সৃষ্টি করে পুরো দেশটায় অস্থিতিশীল ও অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছে।

লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ