
মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি বিশেষ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে জায়গা দখলচেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে দ্বারেদ্বারে ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি জানিয়ে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, ভুমিদখলদারদের নির্যাতনের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে সাতকানিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে এমনটি অভিযোগ করেন সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম নলুয়ার তালতল এলাকার হাফেজ মনির আহমদের ওয়ারিশগণ ও হাফেজ হোছাইন আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্য হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন হাফেজ হোছাইন আহমদ, হাফেজ শামসুল ইসলাম ও আবদুর রহমান সওদাগর।
লিখিত বক্তব্যে হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, আমার আব্বা মনির আহমদ ও চাচা হোছাইন আহমদ যৌথভাবে ২০০১ সালের ৬ জানুয়ারী চন্দনাইশ উপজেলাধীন বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ এলাকার শামসুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী তাহেরা বেগমের কাছ থেকে ৪০ শতক জমি ক্রয় করেন।
অপর পক্ষে আমাদের এলাকার আব্দুল কাদের আনসারী চন্দনাইশ উপজেলাধীন বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ এলাকার মোরশেদুল আলম চৌধুরীর ওয়ারিশ থেকে কিছু জমি ক্রয় করেন। মোরশেদুল আলম চৌধুরীর অপর ২ ওয়ারিশ কন্যা শাহানাজ বেগম ও রোকেয়া বেগমের কাছ থেকে ২০০৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী মনির আহমদ ও হোছাইন আহমদ ৪ গন্ডা জমি ক্রয় করেন। জমি বিক্রেতাগণ জমি ক্রেতাগণকে কাগজপত্র মোতাবেক স্ব স্ব জমির দখল বুঝিয়ে দেন এবং ক্রেতাগণ নিজনিজ জমির দখল বুঝে নেন।
হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, জমি ক্রয়ের কিছুদিন পর আব্দুল কাদের আনসারী আমার আব্বা মনির আহমদকে উভয়ে নিজনিজ মালিকানাধীন জমি থেকে ২গন্ডা করে মোট ৪গন্ডা জমি দান করে উক্ত জায়গায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলে আমার আব্বা রাজি হন। কিন্তু পরবর্তিতে আব্দুল কাদের আনসারী আমার আব্বাকে তার নামে জায়গা রেজিঃ করে দিতে চাপ সৃষ্টি করলে আমার আব্বা জায়গা মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিবেন বলে জানান। জায়গা না পেয়ে আনসারী ভিন্ন পথে গিয়ে প্রায় ২ বছর পর ২০০৩ সালে হকসফি মামলা করেন। উক্ত হকসফি মামলার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বৈঠক হলেও কোন সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য আমার আব্বা ও চাচা তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর দারস্থ হলে তিনি বিষয়টি মিমাংসার জন্য ডা. নুরুল হকের কাছে পাঠান।
ডা. নুরুল হক জামায়াত নেতা মাওলানা রুহুল আমিনকে প্রধান করে মোট ৫ সদস্যের কমিটি করে বিষয়টি ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালা করে দিতে বলেন। কিন্তু মাওলানা রুহুল আমিন ডা. নুরুল হকের দেওয়া সদস্যদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোক নিয়ে মিমাংসার নামে খালি স্টাম্পে আমার বাপ-চাচার স্বাক্ষর নেন। কিন্তু মিমাংসা না করে ওই স্টাম্পগুলো দিয়ে ভুয়া সালিশী রোয়েদাদ তৈরি করে। পরবর্তীতে এই ভুয়া রোয়েদাদের বিরুদ্ধে আমার বাপ-চাচারা আদালতের সরনাপন্ন হয়। আদালত এই ভুয়া রোয়েদাদ ও হকসফি মামলায় আমাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এঘটনা চলাকালে বিভিন্ন সময়ে আমার বাপ-মা, ভাই-বোনকে আব্দুল কাদের ও তার ছেলেরা একাধিকবার মারধর করে। আমার বৃদ্ধ পিতাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমরা আইনের আশ্রয় নিলেও কোন সুফল পাইনি। অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতি মুহুর্ত আমাদেরকে নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই না, আমাদের ভাড়া ঘরের দোকানদার আবদুর রহমানকেও মেরে রক্তাক্ত জখম করে।
তিনি আরো বলেন, এই জালিমরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের উপর প্রতিনিয়ত জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এক দিকে জায়গা দখল আর অন্য দিকে শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। আমাদের প্রতিটা দিন কাটে চরম অনিশ্চয়তায়।
আমরা প্রশাসন ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের পৈত্রিক জায়গা-জমি ফেরত ও জীবনের নিরাপত্তাদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাই।