মীরসরাই সংবাদদাতা : মীরসরাই মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮জন ননএমপিও শিক্ষককে চাকুরীচ্যুতির নোটিশ দিয়েছে মীরসরাই মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এরই প্রতিবাদে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা অত্র বিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা।
চাকুরী স্থায়ী করনের এক দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে মীরসরাই মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি ৫ মাস আগে স্কুল সরকারী করনের পর ১৮ বছর থেকে যারা খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ক্লাস নিয়েছেন তাদের চাকুরী স্থায়ীকরনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা না করে এতোদিন ধরে নিরলসভাবে পাঠদান করে আসা শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুতির নোটিশ দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিন। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা মহাসড়কে আন্দেলনের কর্মসূচি ঘোষনা দিয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পরিক্ষা বর্জন করবে, ক্লাসে ফিরবে না বলে জানা গেছে।
আজ ২১ নভেম্বর, বৃহষ্পতিবার দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে অফিস থেকে দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ এবং ননএমপিও শিক্ষকদের চাকুরীতে পুর্নবহালের দাবি জানিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন। এসময় ঢাকা মূখী লেইনে গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লাগাতার কর্মসুচির ঘোষনা দিয়ে বিকেল ২টায় সমাবেশ শেষ করে।
চাকুরীচ্যুত খন্ডকালীন (ননএমপিও) শিক্ষকরা হলেন, মোঃ এমরান উদ্দিন (বিজ্ঞান), ফারজানা আক্তার (ইংরেজি), হিরন্বয় (ইতিহাস), ফারহানা (গনিত),পলাশ (বিজ্ঞান), আসমা (বাংলা), নুরুল মোস্তফা (ইংরেজি) ও মিসেস এরিকা (বাংলা)। এদের মধ্যে নুরুল মোস্তফা ও মিসেস এরিকা ১৮ বছর যাবত এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ৯ম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ আলা উদ্দিন বলেন, ‘এই স্কুলে আমাদের পূর্বে ১৮ বছর শিক্ষকতা করে তারা নিয়োগ পায়না। প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেট করে নিয়োগ বানিজ্য করেছেন। স্কুলের মার্কেট করে লক্ষ লক্ষ টাকা বেহাত করেছেন। অথচ ১৮ বছর ধরে স্কুলে শিক্ষকতা করে ৮ জন ননএমপিও শিক্ষক নিয়োগ পায়নি। আমরা প্রিয় শিক্ষকরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে স্কুলের এতোদিনের শিক্ষার সুনাম ধরে রেখেছেন।’
৯ম শ্রেনীর আরেক ছাত্রী ফারিয়া বলেন, ‘আমরা ক্লাসে এবং স্কুলে এই ৮ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি অন্তরিক দেখেছি। তাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। এই বৈষম্যের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা টিউটোরিয়াল পরিক্ষা বর্জন করবো এবং ক্লাসে ফিরে যাবো না। আমাদের এক দপার আন্দোলন চলবে। এখানে কারো শিক্ষকতার বয়স ১৮ বছর কারো ১০ বছর কারো ২ বছর। অথচ ৫ মাস আগে ১০ জন শিক্ষককে সরকারী করনের প্রেক্ষিতে আত্তীকরন করা হয়েছে। এর পর ননওমপিও শিক্ষকদের বিদায়ের তালবাহানা শুরু করে প্রধান শিক্ষক। সর্বশেষ তাদের চাকুরিচ্যুতির চুড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে। আমরা সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা এই খবর পেয়ে মনো কষ্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছি।’
প্রধান শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন জানান, ‘এতদিন ধরে আমাদের ৮ জন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলো। এদের মধ্যে ১৮ বছর যাবত শিক্ষকতা করছেন এরকম শিক্ষক রয়েছে ২ জন। বাকিরা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন। গত ১১ এপ্রিল ২০১৮ সালে স্কুল সরকারীকরনের প্রেক্ষিতে কর্মরত ১০ জন শিক্ষককে ৬ মার্চ ২০২৪ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারী বিধিমালা ২০২৪ অনুযায়ী সরকারীকরনের মাধ্যমে আত্তীকরন করা হয়। বাকি ৮জন খন্ডকালীন শিক্ষক রাখার মতো সরকারী নির্দেশনা নেই। স্কুলের অতিরিক্ত বরাদ্ধ নেই। আমরা তাদের অনেক আগে থেকে অন্যত্র চলে যেতে বলেছি তারা যায়নি। এখন আমরা তাদের রাখা সম্ভব নয়।’
মীরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের জানান, ‘ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করছে শুনে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেছে।’