দিন দিন তা বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এই অবস্থা ‘মহামারী’ আকার ধারণ করেছে বললেও ভূল হবে না। একটি ঘটনার শেষ হতে না হতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে প্রতি নিয়ত। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর তো থাকছেই। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এর প্রতিকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এবার দেখা গেলো শ্রমিকদের ধর্মঘটে দফায় দফায় আটকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরই মারা গেল সাতদিন বয়সী এক শিশু। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় শ্রমিকদের আটকে রাখা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর মারা যায় ওই শিশু।
আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুটি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে। মাত্র সাতদিন আগে শিশুটির জন্ম হয়েছিল। এখনো তার নাম রাখা হয়নি।
মৃত শিশুর চাচা আকবর আলীর কথা, রাত থেকে বাচ্চাটা কোনো কিছু খাচ্ছিল না, শুধু কাঁদছিল। আজ সকালে আমরা শিশুটিকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত সিলেট নেয়ার জন্য বলেন। চিকৎসকের কথামতো আমরা বাচ্চাটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সিলেট যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারে, দাসেরবাজার, চান্দগ্রাম বাজারে গেলে আবারও গাড়িটি আটকায় শ্রমিকরা।তিন তিনবার আটকে রেখেও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের খায়েস মিঠেনি আর অ্যাম্বুলেন্স চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরও করা হয়। অথচ শিশুটি সেখানেই মারা যায়। এরপর আমরা বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বলেন, অনেক আগেই শিশুটি মারা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এর কথা , বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এছাড়া ড্রাইভারদের মুখে মুখে কালী লাগানো, নারীদের গায়ে ঢেলে দেওয়, ভাংচুর নৈরাজ্য সৃষ্টি করা এবং এদেরকে প্রশাসনের সহযোগিতা করা বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাড়ায়।
প্রতিবার দুর্ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদন কোনদিন আলোর মুখ দেখে না। আর সঙ্গত কারণেই দোষীদের শাস্তিও হয় না। সমাজের উঁচু স্তর থেকে নিচু শ্রেণির মানুষ- যারাই দুর্ঘটনার শিকার হন না কেন কোন একটি ঘটনার বিচার হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার। আর বিচারহীন, প্রতিকারহীন অবস্থায় কোন কিছু চলতে থাকলে সেটির পুনরাবৃত্তিও তো ঘটবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কত প্রাণ গেলে, মৃত্যুর মিছিল কত দীর্ঘ হলে তবে থামবে এই হত্যাযজ্ঞ?