ঢাকা ব্যূরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ওই চিঠি মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ‘খালি চোখে’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘সহযোগিতা বাড়াতেই’ চিঠি দিয়েছেন মনে হলেও সাবেক কূটনীতিকরা মনে করেন- চিঠির মূল বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে তাগিদ দিয়েছেন জো বাইডেন।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের যে বড় লক্ষ্য আছে, তা অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে, এটি স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে— সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কিছু নীতি আছে এবং সেটি তারা মেনে চলার চেষ্টা করে। ওই নীতিগুলোর মধ্যে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সেগুলো তাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল কাঠামোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
চিঠির বার্তা :
অত্যন্ত দক্ষতার (কেয়ারফুলি ড্রাফটেড) সঙ্গে লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায়ের কথা বলা হয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর প্রথমে উল্লেখ রয়েছে ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার’ বিষয়টি। এছাড়া সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং শেষ দিকে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। এর মাঝে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ অন্যান্য সহযোগিতা।
দুই দেশ তাদের মধ্যে সমস্যা একযোগে সমাধান করে থাকে এবং ‘মানুষে মানুষে সম্পর্ক’ এই দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার ওপর। তবে বাইডেনের পুরো চিঠিতে কোথাও সরকার শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি এবং এটি তাৎপর্যপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘কূটনীতিতে প্রথা অনুযায়ী— নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর অন্য দেশগুলো অভিনন্দন জানিয়ে থাকে। এ চিঠির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সহযোগিতার কথা বলা হলেও অভিনন্দন জানানো হয়নি।’
‘দুই সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপোড়ার যে ঘাটতি রয়েছে, সেটি দূর করার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি’, বলেন সাবেক এই কূটনীতিক।
তিনি বলেন, ‘চিঠিটির আরেকটি দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো উল্লেখ না করেও ইঙ্গিতে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।’
অর্থনৈতিক সহযোগিতা :
‘রাজনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না’, বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে বলে মনে করেন মো. শহীদুল হক।
তিনি বলেন, চিঠিতে বলা আছে- বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে সমর্থন করবে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যভাবে বলা যায়, নিষেধাজ্ঞা হয়তো সহসা আসবে না- এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভূ-রাজনৈতিক সহযোগিতা :
চিঠিতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ করে ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। মিয়ানমারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, বঙ্গোপসাগর সহযোগিতা বা সামগ্রিক ভারত-চীন অস্বস্তিকর সম্পর্কসহ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে মার্কিনিদের।
গত ১৫ বছর ধরে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের নজর এড়ায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মার্কিনিদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশকে তারা কাছে পেতে চাইবে। একই সঙ্গে তারা চাইবে তাদের পররাষ্ট্র নীতির যে মূল বিষয়গুলো সেটিও যেন অক্ষুণ্ন থাকে।’