মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ
জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। চন্দনাইশ বিএনপি এ অবস্থায় নেতৃত্ব সংকটের কারণে কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। সংকট নিরসনের কোন উদ্যোগ নাই বলে জানালেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কর্নেল অলি পৃথকভাবে এলডিপি গঠন করায় চন্দনাইশ বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে যা বহমান। প্রাণহীন হয়ে পড়েছে উপজেলা ও পৌর বিএনপি। কিছুদিন আগে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি’র কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে চন্দনাইশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর কর্নেল অলি বিএনপি থেকে বেরিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেন। ফলে চন্দনাইশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ জেলা বিএনপি ২০০৭ সালে আহবায়ক কমিটি, ২০০৯ সালে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আনে। সে সময় বর্তমান কেন্দ্রিয় বিএনপি’র পরিবার কল্যাণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মহসিন জিল্লুর করিম নতুনভাবে বিএনপিতে যোগদান করে তার অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি ধারা মাঠে-ময়দানে কাজ করে যায়। ফলে চন্দনাইশ বিএনপি ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।
সে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপি চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হলেও মাঝপথে বিরোধী দলের আন্দোলনে সরকারি দলের দমন-নিপীড়ন ও মামলার ভয়ে পিছিয়ে যায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়ে চন্দনাইশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। বিষয়টি অনুধাবন করে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলার সবকটি উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ফলে সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা হতাশায় রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দলের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, চন্দনাইশ বিএনপিকে সাংগঠনিক ও জনপ্রিয় করতে নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল তৎকালীন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল অলি। উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি তিনি দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন। ২০০১ সালের চার দলীয় জোট সরকারের শাসন আমলে কর্নেল অলি মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় রাজনীতিতে কিছুটা পিছুটান পড়েছিল। সে ক্ষোভ থেকে কর্নেল অলি ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর নিজেই এলডিপি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে চন্দনাইশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতিতে ভাটা পড়ে।
বিগত সময়ে সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপি সফল হতে না পারায় নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতা হারিয়ে যায়। ঘুরে দাড়াতে পারেনি পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন নতুন কোন কমিটি ঘোষণা না করায় নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে বিএনপি তথা চন্দনাইশের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। বিগত আন্দোলনে হতাশাজনক পারফরমেন্স করা নেতাদের সাইট লাইনে রেখে দলের ভেতর থেকে বিশ্বস্ত, ত্যাগী, লড়াকু নেতাদের সামনের দিকে তুলে আনতে চায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। চন্দনাইশ বিএনপি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সম্মেলন না হওয়ার কারণে যোগ্য নেতাদের স্থান হয়নি পদ-পদবীতে।
বদলে গেছে চন্দনাইশ বিএনপি ও অফিসের চিরচেনা দৃশ্যপট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যেত। মুখরিত ছিল নেতা-কর্মীদের পদচারনায় চন্দনাইশ বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়। কিন্তু সে চিরচেনা দৃশ্যটি এখন আর চোখে পড়ে না। উপজেলা বিএনপি ত্রি-ধারায় বিভক্ত হওয়ার কারণে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়টি নেতা-কর্মীশূন্য অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। সারা বাংলাদেশে সরকার পতনের আন্দোলন-সংগ্রাম থাকলেও চন্দনাইশে সে রকম কোন কর্মসূচি দৃশ্যমান ছিল না। মাঠে ছিল না বিএনপি’র নেতৃবৃন্দরা। মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে অনেকে বিএনপি কার্যালয়ের আশে পাশেও যায়নি। শুধু তাই নয় বিএনপির কোন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলকে শৃঙ্খলায় রাখতে কোন রকম পদক্ষেপ পর্যন্ত গ্রহণ করেননি বলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। বর্তমানে মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রিয় বিএনপি’র পরিবার কল্যাণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মহসিন জিল্লুর করিম এবং আরেকটি গ্রুপ নিজেরাই সংগঠিত হয়ে ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি সু-সংগঠিত না হলে এবং এলডিপির সাথে ঐক্য না ঘটলে, স্বাধীনতার পর থেকে যে আসনটি বিএনপি’র দখলেই ছিল, তা হারাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল।