আজ : শুক্রবার ║ ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শুক্রবার ║ ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

অক্টোবর-নভেম্বরে স্কুল খুললে পরীক্ষা, ডিসেম্বরে খুললে অটো পাস

দেশচিন্তা ডেস্ক: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও এখনই ‘অটো পাস’ বাস্তবায়নের চিন্তা করছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে হলেও বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অক্টোবর বা নভেম্বরে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে যেটুকু সময় পাওয়া যাবে, তার মধ্যেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও দফায় দফায় বাড়তে থাকে। সবশেষ ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঠিক ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর)।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই দীর্ঘ ছয় মাসে পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে। আর বন্ধের আগে জানুয়ারি থেকে গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান শেষ হয়েছে পাঠ্যসূচির মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পাশপাশি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। তবে পুরো বিষয়টি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসা ও এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ওপরে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, আমরা অক্টোবর ও নভেম্বরকে টার্গেট করে দু’টি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। যদি অক্টোবরের শুরুতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা অক্টোবরে বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রণীত লেসন প্ল্যান নিয়ে কাজ করব। সেক্ষত্রে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা কতটুকু সময় পাব, সেভাবে লেসন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। আর যদি নভেম্বরে খোলা যায়, তাহলে আমরা ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪০ দিন সময় পাব। এই ৪০ দিন মাথায় রেখেও একটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি।

সচিব বলেন, সবকিছু নির্ভর করছে বিদ্যালয় খোলার ওপর। বছর শেষ করার আগে যদি একেবারেই বিদ্যলয় খোলা না যায়, তখন বিকল্প পরিকল্পনায় এগোতে হবে। তবে এখনি এসব বলার সময় আসেনি— মন্তব্য আকরাম আল হোসেনের।

এদিকে, অক্টোবর-নভেম্বরের জন্য লেসন প্ল্যান থাকলেও ডিসেম্বরে বিদ্যালয় খোলা গেলে কোনোভাবেই লেসন প্ল্যান প্রণয়ন বা শিক্ষার্থী মূল্যায়নের সুযোগ থাকছে না। কারণ চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হবে ১৯ জুলাই। আর মন্ত্রণালয় থেকে সবশেষ যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিতে স্কুল খুললেও পাঠদান শুরুর আগে ১৫ দিন সময় নিতে বলা হয়েছে প্রস্তুতির জন্য। সে ক্ষেত্রে ১ ডিসেম্বর স্কুল খুললেও পাঠদান শুরু করা যাবে ১৫ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ছুটি আর ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার থাকায় সেক্ষেত্রে পাঠদানের সময় থাকবে মাত্র ২ দিন! ফলে এই সময়ের মধ্যে কোনো পদ্ধতিই প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। ফলে ডিসেম্বরে স্কুল খুললেও ‘অটো পাস’ ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে সেই ‘অটো পাসে’র পরিকল্পনাও করে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গ্রেড বা জিপিএ নম্বর ছাড়াই সব পরীক্ষার্থীর জন্য পাসের সার্টিফিকেট বিতরণ করা হবে। সেসব সার্টিফিকেটে কোনো জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট উল্লেখ থাকবে না। সার্টিফিকেটে শুধু ‘উত্তীর্ণ’ লেখা থাকবে। সেটি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, প্রাথমিকে অটো পাসের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এলে আমরা যতটুকু সময় পাই, তার মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি প্রয়োগ করব। তবে এসবই নির্ভর করছে বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের ওপর। যেহেতু এখনো বলা যাচ্ছে না যে অক্টোবর বা নভেম্বরে স্কুল খোলা যাবে কি না, কিংবা আদৌ এ বছরে স্কুল খোলা যাবে কি না— তাই এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। যখন যে পরিস্থিতি আসবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।

এর আগে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলের জন্য গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আলোচনার পর পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর পিইসি ও ইবতেদায়ী পরীক্ষা হবে না। একইসঙ্গে এর বিকল্প হিসেবে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত জানিয়ছিল মন্ত্রণালয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ