
করোনা আতঙ্কে দরপতন হচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে আতঙ্কিত। গত সোমবার ৯ মার্চ ঢাকার শেয়ার বাজারে স্মরণকালের সব থেকে বড় পতন হয়। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমে যায় ২৭৯ পয়েন্ট। প্রধান সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চালুর পর একদিনে সূচকটির এত বড় পতন আর হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও বড় দরপতন হয় ঢাকার শেয়ারবাজারে।
ডিএসই’র তথ্য মতে, সবকটি সূচকের এমন পতনের মধ্যে ডিএসই-তে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসই-তে লেনদেন হয়েছে গড়ে ৪১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় গড়ে ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে আতঙ্কিত। বিশেষ করে দেশে করোনা নিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন টালমাটাল। বাংলাদেশের অর্থনীতিও অনেকটা টালমাটাল। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নতি হচ্ছে না।
ডিএসই’র তথ্য বলছে, করোনা আতঙ্কের মধ্যে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। একের পর এক বড় দরপতন হওয়ায় সপ্তাহজুড়ে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এর ফলে এক সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।
শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহের আগের দুই সপ্তাহেও শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে আগের দুই সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমেছে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ নিয়ে টানা তিন সপ্তাহের পতনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন।
গত তিন সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা ৩৮ হাজার কোটি টাকা হারালেও করোনা ভাইরাসের কথা বলে শেয়ারবাজারের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘করোনার সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোনও সম্পর্ক নেই। কাজেই করোনার কথা মাথায় রেখে পুঁজিবাজারে অর্থ দেওয়া হলে সেটা অপচয় হবে।’
এদিকে ডিএসই’র তথ্য বলছে, গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ছয় শতাংশ। আর লেনদেন কমেছে ১৩ শতাংশের ওপরে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসই-তে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ২৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও দাম কমেছে ৩২৬টির। আর সাতটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। যদিও আগের সপ্তাহে মূলধন কমে ৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৬ হাজার ২৭৯ কোটি। অর্থাৎ তিন সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’তে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৪১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এদিকে এক সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৫৪ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছিল ৯৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ২৫২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।