ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মহড়াপাড়া গ্রামে জনগণের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বগুড়ার চতুর্থ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এএসআই শাহাদত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিনাজপুর থেকে আসা পুলিশের একটি টিম সোমবার ২ মার্চ রাতে তাকে সদর থানা চত্বর থেকে গ্রেফতার করে।
এদিকে এএসআইকে রক্ষায় সদর থানার এসআই নুরে আলমের নেতৃত্বে পুলিশ টিমের ওপর চড়াও এবং তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করলেও দিনাজপুর পুলিশ টিমের ওপর সদর থানা পুলিশদের হামলা ও কাউকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা অস্বীকার করেছেন।
দিনাজপুরের হাকিমপুর থানা পুলিশের সূত্র জানায়, এএসআই শাহাদত হোসেন সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি তাকে বগুড়ার চতুর্থ এপিবিএনে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এরপরও শাহাদত নিজেকে বদলাতে পারেননি। তিনি গত ১ মার্চ রবিবার সন্ধ্যার দিকে মাইক্রোবাস নিয়ে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মহড়াপাড়া গ্রামে যান। সাদা পোশাকে থাকা এএসআই শাহাদত নিজেকে ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে কয়েকজনকে আটক করে মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়েও দেন। আটকদের মধ্যে আরমান নামে একজন নগদ টাকা দিতে ব্যর্থ হন। তিনি পুলিশদের দেওয়া একটি নম্বরে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করে মুক্তি পান। রাতে ঘটনাটি জানাজানি হলে আরমানের স্ত্রী তারামনি বেগম হাকিমপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আখিউল ইসলাম জানান, তদন্ত করতে গিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় পুলিশ পরিচয়ধারীদের দেওয়া ওই বিকাশ নম্বরটি বগুড়া সদর থানা সংলগ্ন মার্কেটের বিকাশ এজেন্ট সাজুর। তিনি বগুড়া পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে সোমবার রাতে ফোর্স নিয়ে বিকাশ এজেন্ট সাজুর কাছে আসেন। সেখানে আসার পর জানতে পারেন, ওইদিন দুপুরে এপিবিএনের এএসআই শাহাদত হোসেন স্বাক্ষর করে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এরপর দিনাজপুর পুলিশ দল বগুড়া সদর থানা চত্বরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর রুমে বসেন। রাত ১০টার দিকে তারা কৌশলে ফোনে শাহাদতকে সেখানে ডেকে আনেন।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শাহাদত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এরপর তিনি রুম থেকে বের হয়ে দৌড় দেন। তখন পুলিশের দিনাজপুর টিম তাকে থানার মধ্যেই আটক করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় সদর থানার এসআই নুরে আলম সাবেক সহকর্মী শাহাদতকে চিনতে পেরে এগিয়ে আসেন। তিনি ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য দিনাজপুর টিমের কাছ থেকে শাহাদতকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তারা পরিচয় দেওয়ার পরও ভুয়া পুলিশ বলে চিৎকার করতে করতে সিনিয়র এএসপি আখিউল ইসলাম, তার বডিগার্ড হাকিমপুর থানার এএসআই রাজুসহ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে দিনাজপুর পুলিশ টিম শাহাদতকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ঘটনার সময় থানায় উপস্থিত সাংবাদিকরা ছবি তোলার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুরের হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আখিউল ইসলাম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর গ্রেফতার এএসআই শাহাদতের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, গ্রেফতারের সময় সদর থানার কেউ দিনাজপুর টিমের কাউকে লাঞ্ছিত বা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। থানার সিসিটিভির ফুটেজেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বগুড়ার চতুর্থ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, এএসআই শাহাদতকে গ্রেফতারের বিষয়টি আমরা জেনেছি। যে অপরাধ করবে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’