লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও এক পাথরভাঙা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব শ্রমিক পাথর কাটা, ভাঙা ও গুঁড়ো করার কাজ করেন, তারা সিলিকোসিসে আক্রান্ত হন। কোয়ার্টজ, গ্রানাইট, চুনাপাথরসহ বিভিন্ন পাথরে থাকা স্বচ্ছ সিলিকা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্রমিকের ফুসফুসে ঢুকে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলিকোসিস রোগে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের নাম আমিনুর রহমান। তিনি বুড়িমারী ইউনিয়নের নামাজিটারী এলাকার নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আমিনুর রহমান ও মমতা বেগম দম্পতির সংসারে মমিন হোসেন (৯) ও আমিনা বেগম (৫) নামে দুই সন্তান রয়েছে। এর আগে, চলতি মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থলবন্দরের পাথরভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি মো. মমিন মিয়া (৩৮) একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে মো. মমিন মিয়া ও আমিনুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।
শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরভাঙা কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে সস্তা শ্রমে পাথর ভাঙার কাজ করলেও শ্রমিকদের সুরক্ষায় মালিক ও ব্যবসায়ীরা তেমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে পাথরভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। তারা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা খরচসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
মৃত আমিনুর রহমানের ভাই সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, টাকার অভাবে ভালো কোনও চিকিৎসা করাতে পারিনি। কিছুদিন ধরে আমিনুর রহমান খুবই অসুস্থ ছিলেন। তার ফুসফুস একেবারেই নষ্ট ও শক্ত হয়ে গিয়েছিল। ঠিকমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পাটগ্রাম ও রংপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমিনুর মারা যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমিনুর বুড়িমারীতে পাথর ক্রাশিং কারখানা ভিকটোরি মোজাইকে শ্রমিক হিসেবে দুই বছর কাজ করেছিলেন। সেই সময় সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হলে পাথর ভাঙার কাজ ছেড়ে দেন। কিন্তু রোগটি থেকে মুক্তি মেলেনি। এখন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের কী হবে আমরা জানি না।’
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বুড়িমারী স্থলবন্দরে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস এবং সরকারি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উদ্যোগে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে পরিচালিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই স্বাস্থ্য ক্যাম্পে আমিনুর রহমানের শরীরে প্রথম সিলিকোসিস রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকে আমিনুর রহমান চিকিৎসায় ছিলেন। এর আগে, আমিনুর পাটগ্রাম ও রংপুর মেডিক্যালেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অরুপ পাল বলেন, ‘সিলিকোসিস রোগটি এমন, যিনি আক্রান্ত হন তিনি আর সুস্থ হতে পারেন না। এখানে এমন বেশ কিছু রোগী আছেন। তারা আমাদের হাসপাতালে এলে সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। এর বাইরে তাদের জন্য আমাদের করার কিছুই নেই।’
তিনি পরামর্শ দেন, ‘মূলত পাথরভাঙা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে কারখানাগুলো স্বাস্থ্যসম্মত করতে হবে। কিন্তু বুড়িমারীর পাথরভাঙা কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক কর্মপরিবেশ আছে কিনা, তা নিয়ে নানা ধরনের কথা রয়েছে।’