আজ : শনিবার ║ ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দ্বিগুণ ওয়াসার পানির দাম ক্ষুব্ধ নগরবাসী

রাজধানীতে পানির দাম প্রায় দ্বিগুণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। যদিও নগরের সব এলাকায় নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি দিতে না পারার অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার বিরুদ্ধে।

পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ওয়াসার এমন প্রস্তাবকে অযৌক্তিক এবং গ্রাহকের ওপর নির্যাতনমূলক বলে উল্লেখ করেছেন ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক সংযোগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা, আর বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পানি ও পয়ঃঅভিকর (পয়ঃব্যবস্থা ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষ আরোপিত চার্জ) ছাড়া ওয়াসার আর কোনো আয় না থাকায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে পানির উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি এবং ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক, গ্রাহকের ওপর নির্যাতনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানির মাধ্যমে ওয়াসা আইন অনুযায়ী পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও গুণগত মান নিশ্চিত সাপেক্ষে যৌক্তিক এবং সহনীয় মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধির আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১.৫৭ টাকা থেকে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে ৩৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি) নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির বিধানের সঙ্গে এ প্রস্তাব সাংঘর্ষিক।’

অন্যদিকে, আইন বহির্ভূতভাবে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি না করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১.৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে ৩৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (প্রায় ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি) নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। যা ওয়াসা আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসার মাঠ পর্যায়ের বিল সংগ্রহকারী কিছু অসাধু ব্যক্তি অনৈতিক স্বার্থের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিল ৮০ শতাংশ কমিয়ে ওয়াসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর প্রভাব সাধারণ গ্রাহকদের ওপর চাপানো মোটেও সমীচীন হবে না। ওয়াসার উৎপাদন ও বিতরণ পর্যায়ে দুর্নীতি কমালে মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রয়োজনই হবে না। জনস্বার্থ বিবেচনা করে মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্যারিফ কমিশন দিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে গ্রাহকদের মতামত নিয়েই তবেই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।’

ওয়াসার পানির ইউনিটের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মিরপুরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। রাজধানীর অনেক স্থানেই ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। অনেক সময় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। এরপরও সেবার মান না বাড়িয়ে পানির দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলতে চাই, ওয়াসার এ প্রস্তাব কার্যকর করলে নগরবাসীদের প্রতি জুলুম ছাড়া আর কিছু হবে না। তাই ওয়াসার এ অযৌক্তিক প্রস্তাব যেন মেনে না নেয়া হয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পানি ও পয়ঃঅভিকর ছাড়া ওয়াসার আর কোনো আয় না থাকায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে পানির উৎপাদন ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে। ওয়াসার পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য পানির মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ