
নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। শেষ ঘণ্টা বাজতেই পরীক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসতে লাগলো। তাদের পেছনেই চুল-দাড়ি পাকা এক ব্যক্তি হেঁটে আসতে দেখা গেল। প্রথমটায় মনে হলো হল পরিদর্শক। কিছু সময় পরেই বিভ্রান্তি দূর হলো। তার কোলে একটি মেয়ে। পঞ্চাশোর্ধ্ব ফরমান আলী তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে ফারজানা আক্তার মনিকে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিন বাবার কোলে করেই মনি পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া-আসা করছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার গাগলা বালিকা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর মনি মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। উপজেলার কুটি বাগডাঙ্গা গ্রামের ফরমান আলী ও রাবেয়া বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে সে।তাদের আরও দুটি ছেলেও আছে। মনির উচ্চতা মাত্র ৩৩ ইঞ্চি (পৌনে ৩ ফুট)। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য বাবার কোলে করেই কেন্দ্রে যাতায়াত করে সে।
মনির বাবা প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক। তিনি জানান, মনির বয়স ১৫ বছর ৩ মাস। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অন্যের সহায়তা ছাড়া একা একা সে ভালো করে হাঁটতে পারে না। এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও পড়ালোখা করার ইচ্ছটা তার প্রবল। সেই জোরেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
ফরমান আলী জানান, মনির প্রয়োজনীয় সব কাজ ওর মা করে দেন। তিনি আর তার দুই ছেলে মিলে তাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একটাই মেয়ে আমার, অনেক আদরের। কষ্ট একটাই, মেয়েটা অন্য সবার মতো স্বাভাবিক নয়। মেয়েটা যদি অন্য সবার মতো স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারতো।’
কথাগুলো বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে যায় ফরমান আলীর। নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘ও যতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায় করবে।’
মনি তার ইচ্ছা সম্পর্কে বলে, ‘আমি পড়াশোনা শেষে একটা চাকরি করতে চাই।’
গাগলা বালিকা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো। আশা করি সে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করবে।’
নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি যতবার হল পরিদর্শনে গিয়েছি ততবারই দেখেছি মেয়েটি মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি ওর সফলতা কামনা করি।’