শিল্প কারখানা, অফিস কিংবা বহুতল আবাসিক ভবনের নিরাপত্তার গুরুত্ব ও সচেতনতা বাড়াতে এবং আধুনিক সব ফায়ার সেফটি সিস্টেমের পরিচিতির লক্ষ্যে রাজধানীতে বসেছে ফায়ার সেফটি এক্সপো।
৭ম বারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-ইফসি-২০২০। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার পর্যন্ত।
শুক্রবার ফায়ার সেফটি মেলা ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে
মেলার ভেতরে স্টলগুলোতে ফায়ার প্রোটেকশন, ফায়ার ডিটেকশন, সিসিটিভি এবং ভিডিও সার্ভিলেন্স, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার এলার্ম, ইস্টিংগুইসার (অগ্নি নির্বাপক), পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমসহ রেসকিউ এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে।
মেলার আয়োজক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলায় কোনো ফায়ার সেফটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। মূলত প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফায়ার সেফটির গুরুত্ব, সচেতনতা বাড়ানো এ মেলার লক্ষ্য।
মেলায় নাফকো নামের প্রতিষ্ঠান এনেছে ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেমের উপকরণ। ফায়ার হাইড্রেন্ট, পাম্প, ফায়ার এলার্ম, ফায়ার ডোর, ফায়ার ফাইটিং স্যুট, ফায়ার পেইন, কিচেন ফায়ার সুপ্রেসন সিস্টেম ও সেল্ফ একটিভেটেড ইস্টিংগুইশার।
প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ার সামিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সেল্ফ একটিভেটেড ইস্টিংগুইশার ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অটোমেটিক বিস্ফোরিত হবে। এতে অগ্নিকাণ্ডের ৮ স্কয়ার মিটার এলাকার আগুন দ্রুত গ্যাস নির্গত হয়ে নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম এই ইস্টিংগুইশার। তাছাড়া রান্নাঘরের পুরো গ্যাস সাপ্লাই ও সেফটি সিস্টেমের উপকরণও বিক্রি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এভেনু ট্রেড ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টলে দেখা যায় ফায়ার পাম্প।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস কো-অর্ডিনেটর ওজায়ের আহমেদ বলেন, তিন ধরনের পাম্প সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিজেল ও বিদ্যুৎ এবং উভয় সিস্টেমের। খুব দ্রুত ও গতিশীল প্রক্রিয়া পানি সরবরাহে কার্যকরী এসব ফায়ার পাম্প।
আল-আমিন ট্রেড সিন্ডিকেট এনেছে পাউডারের অটোমেটিক ইস্টিংগুইশার। ৬৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এ ইস্টিংগুইশার অটোমেটিক সিস্টেমে পিন আউট হয়ে গ্যাসের চাপে পাউডার নিঃসরিত হয়ে ১৮০ স্কয়ার ফিট এলাকার আগুন নিমিষেই নিভিয়ে ফেলবে বলে জানান ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তৌফিক আহমেদ খান।
তিনি বলেন, এটা খুবই কার্যকরী। নির্দিষ্ট স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ফায়ার বল সরবরাহ করছে।
মেলায় ফায়ার সিস্টেমের সব উপকরণের পরিচিতি বাড়াতে এসেছে ইউএস বেইজ সিম্প্লেক্স কোম্পানি। পার্টনার প্রতিষ্ঠান ট্রাই জোন, কম্প্লায়ান্স বিডি, ম্যাকানিজমের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাপ্লাই করছে ফায়ার সিকিউরিটির সব উপকরণ।
ইফসি আহ্বায়ক এবং ইসাবের পাবলিসিটি সেক্রেটারি জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মেলার মাধ্যমে আমরা ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে সচেনতা বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া দেশেই যেন ফায়ার সেফটির সক্ষমতা তৈরি হয় সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক আগ্রহ ও ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপারে উদ্যোগী করা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশ অনেক কিছুতে এগিয়ে থাকলেও ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে পিছিয়ে। সেখানেই মূলত জানান দেয়া যে, বাংলাদেশ ওই জায়গাটাতেও সক্ষমতা অর্জন করতে চায়।
আয়োজক ইসাব সূত্রে জানা গেছে, মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, তাইওয়ান, তুরস্ক, ইউএই, পর্তুগাল, স্পেন, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ ২৫টি দেশের ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
মেলায় মোট স্টল রয়েছে ৭৫টি। ইফসির ৭ম আসরে বরাবরের মতো কো-পার্টনার বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। সহযোগী পার্টনার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র্যাব, এনএফপিএ-ইউএসএ, বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বেসিস, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি-বিসিএস, ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট বিজনেস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। শুধুমাত্র নাম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কোনো প্রকার ফি ছাড়াই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।