
দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:
বায়তুশ শরফ আন্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ৪ দিনব্যাপি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদ্যাপন উপলক্ষে “শানে মোস্তফা (সঃ)” নাত ও গজলের আসর ০৮ নভেম্বর ১০ই রবিউল আউয়াল ১৪৪১ হিঃ জুমাবার বাদে মাগরিব বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বায়তুশ শরফের পীর ছাহেব বাহ্রুল উলূম শাহসূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (মঃজিঃআঃ) সভাপতিত্বে ও মজলিসুল উলামা বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুর রশিদ নূরী এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের নজরে আক্বীদাত পেশ করেন- বায়তুশ শরফের পীর ছাহেব বাহ্রুল উলূম শাহসূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (মঃজিঃআঃ)। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন- “শানে মোস্তফা (স.) চর্চা করা নবী প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত” । সুষ্ঠু, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গঠনে রাসুল (স.) আদর্শ অনুসরণ অপরিহার্য। হুজুরে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৌন্দর্য এতই পূর্ণ তাতে কোন অপূর্ণতার কল্পনাও করা যায় না। তিনি এমন পুষ্প যাতে কোন কাঁটা নেই। তিনি এমন আলো যাতে কোন ধোঁয়া নেই । দো-জাহানের যত কল্যাণ,আখেরাতের যত শান্তি, মন-মানষিকতার যত স্থিতি, এক কথায় দুনিয়া আখেরাতের যতসব কল্যাণ সব তাহার কাছেই এবং তাহার মাঝেই পাওয়া যায়। এমন কোন নেয়ামত নেই যা হুজুর (সঃ) এর দরবারে নেই। হ্যাঁ একটি জিনিস নেই! আর তা হলো “না”শব্দ। অর্থাৎ কাউকে ফিরিয়ে দেয়া, বিমুখ করা এই দরবারে নেই। হে অতীব উত্তম উত্তম বাণীর ধারক-বাহক আমাদের প্রিয় নবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা আপনার সেই মহা মূল্যবান বাণীর উপর নিজেদের সপে দিলাম, যে বাণী গুলোর তুলনায় অন্য কোন বাণী কিছুই না। সে গুলো এমন মনি মুক্তা যা কোন সমালোচনা নেই, সে বয়ান এমন স্পষ্ট, যার ব্যখ্যা দরকার হয়না। খোদার কসম! খোদা প্রাপ্তির একমাত্র দরবার হলো, দরবারে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দরবারে মোস্তাফা (সঃ) এ তাওহীদ ও রেসালাত ছাড়া অন্য কোন আশ্রয় ও ঠিকানা মিলবেনা।সুতরাং যে আল্লাহকে পেতে চায়, সে যেন দরবারে মোস্তফা হয়েই আল্লাহর কাছে যায়। আর দরবারে মোস্তফায় যার কোন উপস্থিতি নেই, মহান আল্লাহর দরবারেও তার জায়গা নেই।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা এর উপাচার্য প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ (আহসান সাইয়্যেদ), প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন-মদিনা কেন্দ্রিক ইসলামি সাহিত্যের যে যাত্রা শুরু হয়, তা ইসলামি দাওয়াতের সাথে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের যে কোন ভাষার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের কবি-সাহিত্যিকরা তাদের প্রতিভাকে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। এভাবে ইসলামি সাহিত্যও আন্তর্জাাতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে।
আল্লাহর হাবীব (সঃ) এর উচ্চ মানের পান্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্যের সামনে আরবের যুগ শ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকরা ভাষা হারিয়ে অবাক হয়ে বোবা বনে গেছে। কাউকে এমন মনে হয় যেন সে বোবা হয়ে গেছে। একটি শব্দও বের হচ্ছে না। মনে হয় যেন তার মুখে কথা বলার জিহ্বা নেই। আবার কারো অবস্থা এমন নিঃস্ব হয়ে গেল , যেন তার শরীরে প্রাণের অস্থিত্ব নেই। রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শান ও শওকতের বিবেচনায় দুনিয়ার কেউ তাহার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি কখনো পরবেনা এত সত্বেও তিনি দয়া করে সবাইকে কাছে রাখতেন।সুতরাং যে কোন কেউ নৈরাশ হয়ে তাহার সান্নিধ্যে তালাশ করলে তার জন্যে আনন্দের সংবাদ হলো তিনি সর্বস্থানে সকলের অতি নিকটে অবস্থান করেছেন।এটা হতে পারেনা যে, জান্নাত সুন্দর নয়। তবে জান্নাতের সৌন্দর্য্যরে একটি কল্পনা আছে, কারণ জান্নাততো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর থেকেই সৃষ্ট। আর যে ব্যক্তি নিজের সিনাকে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বত দ্বারা মদিনা বানিয়ে নিয়েছে তার তুলনা জান্নাতও হতে পারেনা। তার নূরেতেই সব কিছু আলোকিত, তাহার নূরের সামনে সকল আলো লুকায়িত। যেমনিভাবে সুবহে সাদিকের আলো সূর্যের আলোর সামনে অস্থিত্বহীন হয়ে যায়।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও শিক্ষানুরাগী আল্লামা কাজী নাছির উদ্দীন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মীর মোহাম্মদ আনোয়ার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আল্হাজ্ব লুৎফুল করিম, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন কমিটি ২০১৯ আহ্বায়ক মাওলানা ওবাইদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, আরো উপস্থিত ছিলেন, খতিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, শাহজাদা মাওলানা আব্দুল হাই নদভী, শাহজাদা মাওলানা মুহাম্মদ ছলাহ্ উদ্দীন বেলাল, সাবেক ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক- মাওলানা আবুল হায়াত মোহাম্মদ তারেক, ডা. আনোওয়ার হোসেন, মাওলানা কাজী জাফর আহমদ, মাসিক দ্বীন দুনিয়ার সম্পাদক- আলহাজ্ব মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ.বি.কে. মহিউদ্দীন শামিম, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, আল্হাজ্ব মিফতাহুল হুদা, হাজী আহমদ হোসাইন, মাওলানা হাফেজ নিজাম উদ্দীন, মাওলানা কাজী শিহাব উদ্দীন,শাহজাদা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা আব্দুশ শাকুর, মাওলানা নুরুদ্দীন মাহমুদ,মোঃ এহছানুল হক মিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন-মাওলানা আব্দুশ শাকুর।
শানে মোস্তফা (সঃ) গজলের আসরে দেশে বিদেশের বহু উর্দূ, ফারসী, বাংলা গজলের শায়েরের পদচারণায় বাদ মাগরিব থেকে বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ উৎসব মুখর হয়ে উঠে। শায়েরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা হারুন কাদেরী, মাওলানা আশরাফ বিহারী, আমীর আলী শরিয়তপুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবু দাউদ শাহ্ শরীফ, শাহেদুল করিম খান, শোয়াইব বিন হাবীব, মাওলানা আবদুন নূর, ইমাদ উদ্দিন সাআদ প্রমুখ। এ বছর বায়তুশ শরফ আন্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে যে তিনজন গুণীব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেয়া হবে এবং একজন প্রয়াত গুণীকে স্মরণ করা হবে, তাঁরা হলেন-
# প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হিসেবে কর্মজীবনের সূচনালগ্ন হতে সর্বপর্যায়ে ইসলামের সুমহান আদর্শের প্রচার-প্রসার, বিশুদ্ধ কুরআন-হাদিস চর্চা ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে স্বীয় ধর্মের সৌন্দর্য্য প্রস্ফুটিত করার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
# জনাব প্রফেসর ডা. এ.জে.এম. সাদেক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, টঝঞঈ চট্টগ্রাম। চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে দুস্থ-মানবতার কল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে এই সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।
# জনাব আলহাজ্ব রফিক আহমদ, নির্বাহী প্রধান, মমতা, চট্টগ্রাম; যিনি জীবনের সূচনালগ্ন থেকে সততা ও বিশ্বস্ততার মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবা, শিক্ষার সম্প্রসারণ, ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ ও সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন এবং রেখে চলেছেন।
# চতুর্থ গুণীজন এমন এক ব্যক্তি, যিনি কর্ম জীবনের প্রথমলগ্ন থেকে সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে সাংবাদিকতা পেশা অবলম্বনের মাধ্যমে সত্যের প্রকাশ, আর্তমানবতার সেবা, শিক্ষার সম্প্রসারণ ও ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি হচ্ছেন মরহুম সাংবাদিক হেলাল হুমায়ুন। তাঁকে মরণোত্তর স্মরণ ও সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, আজ ০৯ নভেম্বর শনিবার (১) ফোরকানিয়া প্রতিযোগিতা (তিন বিভাগে) সকাল ৯ টায়, (২) আযান প্রতিযোগিতা সকাল ১১ টায়(১২-১৫ বছর)। (৩) কেরাত প্রতিযোগিতা জুনিয়র গ্রুপ (অনূর্ধ্ব ১৪ বছর পর্যন্ত) ১২.০০টা খ) সিনিয়র গ্রুপ (১৪ বছরের উর্ধ্বে) বিকাল ২.৩০ মিনিটে (৪) আরবী কবিতা আবৃত্তি (বাদে আসর) ১৫ বছর উর্ধ্বে।