আজ : রবিবার ║ ৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : রবিবার ║ ৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২৪শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

৫০০ বছরের ইতিহাসে গৌরবময় সোনামসজিদ

দেশচিন্তা ডেস্ক: পাঁচ শতাব্দীর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক সোনামসজিদ। মধ্যযুগীয় সুলতানি স্থাপত্যশৈলীর এই নিদর্শনটি শুধু ইতিহাসপ্রেমী নয়, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও এক অনন্য আকর্ষণ।

সোনামসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড় থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। যাতায়াতের জন্য বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি বা অটোরিকশা সহজলভ্য।

মসজিদটি নির্মিত হয় বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ) শাসনামলে। প্রধান প্রবেশপথের শিলালিপি অনুযায়ী, জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহাম্মদ বিন আলী এটি নির্মাণ করেন।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার এটি পুনঃনির্মাণ করে। ইটের তৈরি এই মসজিদের ওপর পাথরের স্তর বসানো হয়েছে।

বাইরের পরিমাপ ৮২ ফুট দ্ধ ৫২.৫ ফুট, ভেতরের পরিমাপ ৭০ ফুট ৪ ইঞ্চি দ্ধ ৪০ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এতে রয়েছে তিনটি মাঝারি গম্বুজ, ছয়টি করে পাশের গোলাকার গম্বুজ এবং তিনটি চৌচালা গম্বুজ—যা স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য।

চারদিকে চারটি অষ্টকোণাকৃতির বুরুজ, প্রবেশপথে তোরণ, দেয়ালে খোদাইকৃত পাথরের কারুকার্য ও ইটের সজ্জা ইতিহাসপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও শহীদ মেজর নাজমুল হক টুলুর কবর, যা দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

পর্যটকরা এখানে এসে নামাজ আদায়সহ আশপাশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন। বগুড়ার কায়েস আলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সোনামসজিদের গল্প শুনেছি, আজ নিজ চোখে দেখে খুব ভালো লাগলো।’

রাজশাহীর মাইনুল ইসলাম দিপু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এখানে আসার ইচ্ছে ছিল। সবকিছু দেখে আনন্দিত হলাম।’

সোনামসজিদের আশপাশে রয়েছে দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা, খঞ্জন দিঘির মসজিদ, তহখানা কমপ্লেক্স, তিন গম্বুজ মসজিদ, শাহ নিয়ামতউল্লাহর মাজার ও ধনিয়াচক মসজিদ—যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কে ভারী যানবাহনের গতিবেগের কারণে মসজিদে কম্পন অনুভূত হয়, যা স্থাপনাটিকে ঝুঁকিতে ফেলছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘পুরাতন মসজিদ কোনো ক্ষতি না হয়, সেই আশঙ্কা থাকেই।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আসিফ বলেন, ‘সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ৪৮১ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মসজিদের সামনে ঢালাই ও উন্নত প্রযুক্তির কাঁচের দেওয়াল নির্মাণ করা হবে, যাতে কম্পনের কারণে কোনো ক্ষতি না হয়।’

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী বলেন, ‘সোনামসজিদসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

৫০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের ধারক এই সোনামসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি চিরকালই এক অপূর্ব দর্শনীয় স্থান হিসেবে সমাদৃত থাকবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ