
দেশচিন্তা ডেস্ক: বর্ষীয়ান বামপন্থী রাজনীতিক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি কমরেড আহসান উল্লাহ্ চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি একাধারে ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কিংবদন্তীতুল্য শ্রমিক নেতা ছিলেন।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাত সোয়া ৯টায় চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জনার্দনপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৮৯ বছর বয়সী আহসান উল্লাহ্ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) প্রয়াত আহসান উল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ শেষবারের মতো চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেইনে সিপিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এসময় সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, উদীচী চট্টগ্রাম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, প্রগতির যাত্রীসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন প্রয়াতের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সিপিবির পক্ষ থেকে মরদেহ লাল পতাকায় ঢেকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও গেরিলা যোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ। এসময় বক্তারা শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রমিক শ্রেণির লড়াকু পার্টি হিসেবে সংগঠিত করতে আহসান উল্লাহ চৌধুরীর অবদান তুলে ধরেন।
সিপিবি কার্যালয় থেকে প্রয়াতের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজগ্রাম মীরসরাইয়ের চৈতন্যের হাটের জনার্দনপুর গ্রামে। সেখানে মীরসরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলাউদ্দিন কাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
আহসান উল্লাহ্ চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। ছাত্রজীবনেই তিনি বামধারার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। এরপর থেকে প্রায় অর্ধশত বছর তিনি সক্রিয়ভাবে বিপ্লবী ধারার শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে গঠন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতেও আহসান উল্লাহ চৌধুরী নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, ১৯৭২ সালে সহ-সম্পাদক, ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম নগর কমিটির সম্পাদক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগর ও উত্তর জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা কমিটি হলে তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ১৯৮৬ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।
কমরেড আহসান উল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রাক্তন সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ, অমল কান্তি নাথ ও উদয়ন নাগ, বাসদ (মার্কসবাদী) ও চট্টগ্রাম জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ, উদীচী চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি টিকলু দে ও সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।