আজ : শনিবার ║ ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : শনিবার ║ ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হামাসকে মুছে ফেলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

দেশচিন্তা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের গ্রাস করা অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সহিংসতা কমাতে এবং গাজার ভূমিকা পুনর্গঠন করাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন—যদি হামাস গাজায় করা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং মানুষ হত্যা চালিয়ে যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ওই অভিযানগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশগ্রহণ করবে না।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা চালিয়ে যায় — যা চুক্তির অংশ ছিল না — তাহলে তাদের মেরে ফেলার ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় থাকবে না।” তিনি একই সঙ্গে জানান, এই কাজ যুক্তরাষ্ট্র নিজে করবে না; বরং “খুব কাছেই” এমন প্রকৃতিপ্রযুক্তি আছে যারা এই কাজ করতে পারবে, এবং তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে। ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির পেছনে মূল কারণ— গাজায় অভ্যন্তরীণ গ্যাং সহিংসতা, মানবিক সহায়তা লুটপাট ও চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ।

গত কিছু সময়ে গাজায় স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গ্যাংগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব গ্যাংকে ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে; এমনকি কিছু গ্যাংকে অস্ত্র সরবরাহের কথাও স্বীকার করেছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। জুন মাসে এমনই কিছু গ্যাংকে অস্ত্র দেয়ার কথা প্রকাশ পেয়েছিল—এগুলোর মধ্যে ছিল আইএসআইএস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর উপস্থিতিরও তথ্য। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে, গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, যেসব গ্যাং সদস্য রক্তপাতের সঙ্গে জড়িত ছিল না তাদের নির্দিষ্ট ক্ষমা দেয়া হবে। তবে গ্যাং-হিংসার এক ঘটনায় অবশ্য প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়িকে খুন করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেন, “এটা আমরা করব না। আমাদের সেটা করারও প্রয়োজন হবে না। এমন লোক আছে, খুব কাছেই আছে, যারা গিয়ে কাজটা সহজেই করে ফেলবে, আমাদের তত্ত্বাবধানে।” তিনি কোনো দেশের নাম না দিলেও ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের দিকে ছিল। এরপর ট্রাম্প আবারও বলেছিলেন, যদি হামাস স্বেচ্ছায় অস্ত্র না ছেড়ে দেয়, “তাহলে জোর করে করা হবে — খুব দ্রুত, হয়তো সহিংসভাবেই।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সময় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস হামাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আব্বাসের দপ্তর বলেছে, হামাসের সন্দেহভাজন সহযোগীদের হত্যাকাণ্ড “ভয়াবহ অপরাধ” ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আর আইনশৃঙ্খলার দিক থেকেও এ ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের আগের বক্তব্যগুলোর সঙ্গে তার সাম্প্রতিক হুমকির টোনেও পরিবর্তন দেখা যায়। সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, গাজায় গ্যাং দমন অভিযানে হামাসের কার্যক্রমে তার আপত্তি নেই—হাতে-খড়ি খেয়ে গ্যাং নির্মূল হলেও তিনি তখন তেমন বিরক্ত নন বলে মন্তব্য করেছিলেন। এখন তিনি চরম সতর্কতা ও জোরালো দস্তুর প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।

ট্রাম্প বলছেন, তার লক্ষ্য হলো গাজায় অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা—তার শর্তগুলোর মধ্যে হামাসকে নিরস্ত্র করা ও গাজার প্রশাসনে তাদের ভূমিকা শেষ করা আছেন। তবে হামাস কোনো যোগ্যতা নিয়ে এই শর্তগুলো মেনে নেবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। যদি হামাস মানতে অস্বীকার করে, তাহলে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে—বিশেষত যখন একটি তৃতীয় পক্ষ সরাসরি লড়াইয়ে না জড়ালেও নির্ধারকভাবে অন্য দলগুলোকে সমর্থন বা তত্ত্বাবধান করে সহায়তা করবে বলে দাবি করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ