
দেশচিন্তা ডেস্ক: মানববিহীন যুদ্ধবিমানের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে তুরস্ক। ফাইটার জেট প্রযুক্তিতে নতুন মাইলফলক যোগ হলো। রাডার নির্দেশিকা ব্যবহার করে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একটি বিমানকে সফলভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে যুদ্ধবিমানটি। এর মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিমানের ইতিহাস রচনা করলো তুরস্ক।
তুরস্কের এই মানববিহীন যুদ্ধবিমানের নাম বায়রাকতার কিজিলেলমা। গত রোববার (৩০ নভেম্বর) তুরস্কের বৃহৎ ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বায়কার এক ঘোষণায় জানায়, বায়রাকতার কিজিলেলমা সফলভাবে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (বিভিআর) ছুড়ে জেট ইঞ্জিনচালিত একটি চলন্ত লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করেছে। বিশ্বের প্রথম মানববিহীন যুদ্ধবিমান হিসেবে কিজিলেলমা এই সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
তুরস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এন–সোশ্যালে এক পোস্টে বায়কার জানায়, ‘বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান বিভিআর দূরত্বে এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চলন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলো।’
বায়কার আরও জানায়, স্থানীয়ভাবে তৈরি আকাশ–থেকে–আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ‘গোকদোয়ান’ নিক্ষেপ করে কিজিলেলমা উচ্চগতির জেটচালিত লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
লক্ষ্য শনাক্ত ও অনুসরণে ব্যবহার করা হয়েছে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত মুরাদ অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) রাডার, যা তৈরি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আসেলসান। রাডার শনাক্তকরণের পর কিজিলেলমার ডানার নিচে স্থাপিত পড থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়।
তুরস্কের ইতিহাসে এটাই প্রথম ঘটনা যেখানে কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান স্থানীয় রাডার ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে আকাশ–থেকে–আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জেটচালিত উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুতে সফল আঘাত হেনেছে। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে কিজিলেলমা বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র মানববিহীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশযুদ্ধ সক্ষমতার স্বীকৃতি পেল।
এর আগে কিজিলেলমা একটি এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্য করে পরীক্ষামূলক মিশনও সম্পন্ন করেছিল বলে জানায় বায়কার। তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি এরোস্পেস কৌশলের প্রতিফলন ঘটেছে এই পরীক্ষায়।
কৃষ্ণসাগরের উপকূলীয় সিনোপ প্রদেশের আকাশে পরিচালিত এ পরীক্ষাটি ছিল তুরস্কের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, মেরজিফন বিমান ঘাঁটি থেকে পাঁচটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিজিলেলমার সঙ্গে একসঙ্গে উড্ডয়ন করছে।
মনুষ্যচালিত ও মানববিহীন প্ল্যাটফর্মের এই যৌথ মিশন আকাশযুদ্ধের নতুন ধারণা তুলে ধরেছে। মিশনে আকাশ থেকে দৃশ্য ধারণের জন্য বায়রাকতার আকিনচি নামক মানববিহীন ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে বায়কারের ড্রোন–উৎপাদন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সফলতার অংশ এই কিজিলেলমা। কম রাডার সিগনেচার ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির কারণে এটি দূর থেকে শত্রু উড়োজাহাজ শনাক্ত করতে সক্ষম, অথচ রাডারে ধরা পড়ে না।
মুরাদ এইএসএ রাডার, তয়গুন টার্গেটিং সিস্টেমসহ নানা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এতে সংযোজন করা হয়েছে। এর আগে পরিচালিত পরীক্ষায় এটি তোলুন ও তেবের–৮২ নামক গোলাবারুদ দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছিল।
বায়কারের চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলচুক বায়রাকতার এক ভিডিওতে বলেন, ‘আজ উড্ডয়ন–ইতিহাসের এক নতুন যুগের দ্বার উম্মোচন করেছে বায়রাকতার।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান রাডার–নির্দেশিত এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে নিখুঁতভাবে আকাশের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানল।’

















