
মো. দেলোয়ার হোসেনহচন্দনাইশ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনে নবীন-প্রবীন রাজনৈতিক নেতা থেকে ব্যবসায়ী পর্যন্ত আ.লীগে নৌকা’র মাঝি হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ২৩ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে দলীয় কার্যালয়ে অনেকেই জমা করেছেন।
গত ১৪ নভেম্বর দলীয় সিলেকশন বোর্ডে সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন এসকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ আ.লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেছেন, যে আসনে যত প্রার্থী, সে আসনে নেতৃত্বের দুর্বলতা তত বেশি, এটা অসনি সংকেত। ৬টি সংস্থার জরিপে যাদের নাম এসেছে সেখান থেকে যাছাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। ফলে এ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি-এ নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছেন ২৩ প্রার্থীর।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে, ৩ দিনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ২৩ জন। তৎমধ্যে দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, আপন দু’সহদোর, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী, দু’মহিলা নেত্রী। দু’সহদোয়ের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী। এ আসনে আ.লীগের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহনশীলতার ঘাটতির কারণে চন্দনাইশ সৃষ্টি হওয়ার পর ২৩ জন প্রার্থী এবারেই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। পরস্পরের প্রতি পূর্ব থেকে আত্মবিশ্বাস ও দলীয় কোন্দল অব্যাহত থাকার কারণে এতজন প্রার্থী হয়েছে বলে বিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল মনে করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় আ.লীগের নীতি-নির্ধারকদের সবুজ সংকেত কে পাচ্ছেন? এ নিয়ে মনোনয়ন প্রার্থীদের নির্ঘুম রাত কাটছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ রক্ষা করে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষে। ২৩ প্রার্থীর মধ্যে বেশ কয়েকজন পূর্ণ আশাবাদী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যদেরকে সমর্থন দেয়ার লক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, এমনটিও শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ হাসি কে হাসবে, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন-তার জন্য অপেক্ষা করতে আরও কয়েক দিন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজস্ব সমর্থকদের মাঝে বাক-বিতন্ডতাও অব্যাহত রয়েছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, গ্রহণযোগ্যতা সর্বোপরি তিনি একজন জনবান্ধব নেতা কিনা?
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক আড্ডায়, অনুষ্ঠানে, পাড়ায়-মহল্লায়, বাজার, অলি-গলিতে, চায়ের দোকানে মনোনয়ন কে পাবে বা শেষ পর্যন্ত আ.লীগের দলীয় প্রার্থী কে হচ্ছেন? এ নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই।
যে যার পছন্দনীয় প্রার্থীর পক্ষে গুণ-গান, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক কর্মসুচি, সামাজিক অনুষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য- সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সফল, সৎ কর্মকান্ডগুলো তুলে ধরে প্রার্থীর পক্ষে সমর্থনমূলক কথা-বার্তা বলে চলেছেন। সে সাথে সাধারণ মানুষের কাছে প্রার্থীদের মধ্যে কে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয়, ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কার সবচেয়ে যোগাযোগ বেশি-এসব কথা উঠে আসছে এ সকল স্থানে। সর্বোপরি চট্টগ্রাম-১৪ আসনের (চন্দনাইশ-সাতকনিয়া) আংশিক এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া জোরে-সোরে বইতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের মুখেমুখে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলছে কথা। প্রার্থীদের কর্মময়, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। বিজ্ঞ জনদের মধ্যে কয়েকজন বললেন, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ইতোমধ্যে যাঁরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত, মুক্তিযোদ্ধা, নেতৃত্বসুলভ আচরন ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে সব মহলে সু-পরিচিতি রয়েছে। এসব কারণে এলাকার সাধারণ ভোটাররাও নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এধরনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন, সাধারণ ভোটাররা। প্রার্থীরা যে দল বা জোট থেকে নির্বাচন করুক না কেন, ব্যক্তিগত ইমেজ, গ্রহণযোগ্যতা, সততা, অতীতের কর্মকান্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভোটারেরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে বিজয়ী করে আনবেন- এ আসনে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীকে।