
মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ: পর্যটক ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নজর কাড়ছে চন্দনাইশ পৌরসভার বড়–য়া পাড়ায় ৮০ ফুট উঁচু নব-নির্মিত নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তি। ভ্রমণপ্রিয় বাংলাদেশীয়রা ছুটি পেলেই ছুটে চলেন প্রকৃতির কোলে, হারিয়ে যেতে দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে চলে যায়। প্রকৃতির অপরূপের মাঝে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পূর্ব জোয়ারাতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ বুদ্ধমূর্তি বিরেন-উষা নাগরাজবেষ্টিত ৮০ ফুট উচ্চ বুদ্ধ চেতীয় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে এলাকাটি।
দৃষ্টিনন্দন নাগরাজবেষ্টিত দক্ষিণ এশিয়ার সুউচ্চ বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হচ্ছে চন্দনাইশ পূর্ব জোয়ারা সদ্ধর্ম বিদর্শন ভাবনা পরিবেন কেন্দ্রে। অপরূপ কারুকার্য মূর্তি অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন নাগরাজবেষ্ঠিত বুদ্ধমূর্তিটি দন্ডায়মান দেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি হিসেবে। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর এ বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ কাজ শুরু করে এখনো চলমান রয়েছে। ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ডের ১’শ জনের অধিক শিল্পীর শৈল্পিক ছোয়ায় কাজ চলমান। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, আরো কয়েকবছর লাগবে ৮০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তির কাজ সম্পন্ন হতে। এ বুদ্ধমূর্তির ভিতরে দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনের আদলে করা হয়েছে নিচতলায় ধর্মীয় মিউজিয়াম, উপর তলায় ধর্মীয় পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিধান বড়–য়ার আর্থিক সহায়তায় সুউচ্চ নান্দনিক নাগরাজবেষ্টিত বুদ্ধমূর্তিটি তৈরি করতে দেড় কোটি টাকার অধিক ব্যয় হচ্ছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এ কেন্দ্রে গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন আঙ্গীকের গড়া ২৮টি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪টি বুদ্ধমূর্তি বিভিন্ন ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন আকারে স্থাপন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ১৭০ ফুট লম্বা শোয়ানো অবস্থায় ২৪ বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের ভিক্ষু মৈত্রী পাল থেরো। শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে চন্দনাইশ পৌরসভা সদরে পূর্ব জোয়ারা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ এ বুদ্ধমূর্তিটি স্বর্ণাভাব মূর্তিটি পুরো এলাকাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলেছে। আগামীতে ১৭০ ফুট পরিনির্বান শয্যার বুদ্ধ প্রতিবিম্ব স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন দ্ধর্ম বিদর্শন ভাবনা পরিবেন কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভদন্ত মৈত্রীপাল থেরো।
২০০৩ সালে পূর্ব জোয়ারা গ্রামের বৌদ্ধদের অন্যতম মেডিটেশন শিক্ষা কেন্দ্র সদ্ধর্ম বিদর্শন ভাবনা পরিবেন প্রতিষ্ঠিত হয়। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশাল ভাবনা কেন্দ্রে পরিণতি হয়েছে। প্রতিবছর ৪ টির অধিক বিদর্শন ভাবনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ দিনব্যাপী প্রতিটি ভাবনা কর্মশালায় ৫০-৬০ জন অংশ নেয়। এ ভাবনা কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ মিত্র জিনপাল মহাস্থবিরের ঐকান্তিক অনুপ্রেরনায় ও প্রচেষ্ঠায় ভক্ত পরিবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় ৪ একর জমির উপর ভাবনা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। জিনপাল মহাস্থবির মিয়ানমার, থাইল্যান্ডে মেডিটেশনের শিক্ষা লাভ করে শিক্ষার্থীদের দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। দায়ক-দায়িকা, সেবক-সেবিকা, দাতা গোষ্ঠীর আর্থিক সহায়তায় গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ধর্মদর্শী, পুষ্পরাণী, চারি বুদ্ধ (কুকুমন্ধ, কোনাগমন, কশ্যপ, গৌতম) প্যাগোডা (নীলকণ্ঠ, উপ কুঠির) নামে সংঘ প্রধানের বাসভবন, চিন্তহরণ- সুরুচী বালা ভিক্ষু নিবাস, দেশনা হল, চন্দনাইশ ভিক্ষু পরিষদের কার্যালয়, বুদ্ধ প্রমূখ পঞ্চবর্গীয় শিষ্যের প্রতিবিম্ব, সিদ্ধার্থ প্রতিবিম্ব স্থাপন করা হয়েছে। এখানে গৌতম বুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন চার ধরনের মূর্তি রয়েছে। পাশাপাশি আরো বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে। কেন্দ্রটি গৌতম বুদ্ধের বেশকিছু স্মৃতি বিজরিত ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন। বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করার পাশাপাশি শৈল্পিক কারুকার্য করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। যা দেখলে যে কারো নজর কাড়বে। ভাবনা কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৬৬টি মেডিটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বুদ্ধবিহারের সামনে একটি ফুল বাগান, কেন্দ্রের চারপাশে ফুল আর ফল গাছে ভরে আছে। সন্ধ্যা নামলে ফুলের গন্ধে এলাকাটিতে ভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিরাজ করে। সে সাথে রং বেরং এর বৈদ্যুতিক ঝিলিক বাতিতে পুলকিত হয়ে উঠে উপস্থিত সকলের মন। জিনপাল মহাস্থবির সেখানে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একের পর এক তৈরি করে যাচ্ছেন বিভিন্ন কারুকার্যের বুদ্ধ স্থাপনা। তাছাড়া বসার জন্য করা হয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট ছাতা ঘর। সেখানে চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মেডিটেশন শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। ভাবনা কেন্দ্রটি এখন শুধু বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছেই নয়, এটি এখন এলাকাবাসী ও পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের নির্মাণ শৈলীর আদলে এদেশে বহুসংখ্যক বৌদ্ধবিহার ও মূর্তি নির্মাণ করা শিল্পীরা নাগরাজবেষ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ করছেন। এটি শুধু পুণ্য লাভের স্থানই হবে না, সেই সাথে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। একদিকে পূণ্য লাভ অন্যদিকে চন্দনাইশের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে স্বপ্ন থেকে এ বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভাবনা কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও কল্যাণ মিত্র জিনপাল মহাস্থবির।