আজ : সোমবার ║ ১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : সোমবার ║ ১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ২৪শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ভাত দেয়ার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই: ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ

ব্যাটারিচালিত যানবাহন জব্দ বন্ধ, সিএমপি পুলিশের প্রজ্ঞাপন বাতিল ও বিআরটিএ লাইসেন্স,রুট পারমিটসহ ৮ দফা দাবিতে রিকশা ব্যাটারি রিকশা ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার(১৭ আগস্ট) বেলা ১২টায় প্রেস ক্লাব এর এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয়। উপস্থিত ছিলেন ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব সদস্য সচিব মো: মনির হোসেন, সদস্য আহমদ জসিম, মাসুদ, মোহাম্মদ সোহেল, মনির হোসেন, শফি মোহাম্মদ, মহিউদ্দিনসহ নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে আগত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রামে কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার ফলে এসব যানবাহনের চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই হয়রানি ও জুলুমের শিকার হতে হচ্ছে। অনেকদিন ধরেই চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের উপর প্রশাসনিক নানান দমন-পীড়ন ও বিমাতাসুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। শৃঙ্খলা তৈরির নামে নির্বিচারে গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। এমনকি রাতের বেলায় ও গলির ভেতর থেকেও গাড়ি আটক করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘোষণা দিয়েই শহরের নানা জায়গা থেকে গাড়ি জব্দ করছে এবং মামলা দেওয়ার ফলে চালকরা উভয় সংকটে নিপতিত হচ্ছে। একদিকে গাড়ি জব্দ ও মামলা অপরদিকে গাড়ি হারিয়ে আয় রোজগার ও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে চলকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এর ফলে চালকদের বিক্ষোভ করতেও দেখা যাচ্ছে নানা জায়গায়। এই গাড়িগুলো ২১ দিন ধরে রাখার বিধান শুধু নয় ৭৫০/= টাকা রেকার বিলের সাথে অতিরিক্ত ২৫০০/= টাকা জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। ইদানীং চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন থানাসহ নানান জায়গায় পুলিশ অভিযানের নামে চালকদের মারধর পর্যন্ত করার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয় সাধারণ যাত্রী সেজে গাড়িও আটকে রাখা হচ্ছে এমতাবস্থায় আমরা ট্রাফিক আইন এবং সাধারণ নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে চাইলে সেখানেও অসহযোগিতার সম্মুখীন হই। তাই আমরা আপনাদের মাধ্যমে শহরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসনের এই অন্যায় দমন পীড়ন, চালকদের হয়রানি, গাড়ি জব্দ বন্ধ করার আহ্বান জানাই।

গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে একটা গণবিজ্ঞপ্তিতে আমরা দেখলাম চট্টগ্রাম মহানগরে এই ব্যাটারীচালিত যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং যাত্রীদের চলাচলের জন্যও নেতিবাচক প্রচারনা চালানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে যানজট, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, অল্পবয়সীদের দ্বারা গাড়ি চালানোর বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন যেখানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২২ টি মহাসড়ক ব্যতীত ব্যাটারিচালিত বাহন চলাচলের বৈধতার রায় দেয়া হয়েছে সেখানে সিএমপি পুলিশ কমিশনারের এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি কোর্টের রায়ের সাথেই তো সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতাই বা কি?
আমরা জানি বড় শহরগুলোতে যানজট এর কারন প্রধানত প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থা, রাস্তা ও ফুটপাত
দখল, গণপরিবহনের স্বল্পতা, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য, সড়ক-মহাসড়কে সার্ভিস রোড না থাকা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা। একই সাথে আমরা এও জানি সড়কে নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার জন্য ১১৭ টি সমস্যাকে চিহ্নিত করেছে এই বিষয়ে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি। যেখানে সড়ক-মহাসড়ক এর নির্মাণ ও অবকাঠামোগত সিস্টেমের দুর্বলতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে ধরে তারা অনেকগুলো সুপারিশ করেছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি মহাসড়ককে ৪ লেন করা ও প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে লোকাল ও কম গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন/সার্ভিস রোড নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। যা যানবাহন চলাচল ও ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই দরকার। অথচ তিন চাকার এই যানবাহনকে যানজট, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার এবং বিদ্যুৎ অপচয়কারি হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে চট্টগ্রাম শহরের প্রধান জ্যামের জায়গার একটা হচ্ছে বারিক বিল্ডিং থেকে ফ্রি পোর্ট বন্দরটিলা সড়ক। ভাঙ্গা রাস্তা, নির্মাণ কাজ এবং জেটির গাড়ি, লরির জন্য এই রাষ্ট্রয় কয়েক ঘন্টা লেগে যায়। এছাড়া জিইসি-ওয়াসা রোডেও ছুটির দিন বাদে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের জন্য জনদূর্ভোগের জন্য কোথাও তো ব্যাটারিচালিত বাহন দায়ী নয়। এখানে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ, ভাঙাচোরা রাস্তা, দুপাশে সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়ার দরুন নগরের রাস্তায় যানজট তৈরি হচ্ছে।
অন্যদিকে এসব যানবাহনের জন্য চসিক মেয়র মহোদয় কিছুদিন আগেও কিছু নির্দিষ্ট রুটের কথা প্রস্তাবও করেছিলেন।তাহলে সেটা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা দরকার ছিলো। আবার আমরা যখন দেখছি ঢাকা মহানগরীর সিটি করপোরেশনে এভাবে বাস্তবতাকে আড়াল করে গরীব মানুষের উপর দায় চাপানোর প্রশাসনের ভূমিকাটা যেন “ভাত দেয়ার মুরোদ নাই কিল মারার গোঁসাই! “যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত যানবাহন নিয়ে কর্মরত সংগ্রাম পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠনের সাথে বসে আলাপ আলোচনার উদ্যোগ না নিয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।সুপ্রীম কোর্টের রায়কে ও সরকারের নীতিমালাকে অবজ্ঞা করে এধরণের প্রজ্ঞাপন শুধু অস্থিরতা তৈরি করবে,সমাধান আনবে না।
বর্তমান এই সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং নিম্নোক্ত দাবীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি –
আমাদের দাবিসমূহঃ
১। চট্টগ্রাম নগরীতে সুপ্রীমকোর্টের রায়ে বৈধ ঘোষিত ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন জব্দ ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ কর। ২। অবিলম্বে বৈদ্যুতিক যানবাহন নীতিমালা ২০২৫ চূড়ান্ত করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের BRTA অনুমোদিত লাইসেন্স, রূট পারমিট দাও।
৩। সিএমপি কর্তৃক অবৈধ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার কর
৪। জব্দকৃত গাড়ি ২১ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা এবং রেকার বিলের বাইরে অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করা চলবে না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ