
দেশচিন্তা ডেস্ক : চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় আহলে বায়তে রাসূল (দ) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী ৩৮ তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল ২৩ জুলাই রবিবার চতুর্থ দিনে দেশী-বিদেশী আলোচক ও ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, কারবালা ময়দানে আহলে বায়তে রাসূলের (দ) নিষ্পাপ অবুঝ শিশু-নারীরা পর্যন্ত প্রচ- ক্ষুধা ও পিপাসায় ছটফট করছিল। তবুও তাঁরা ধৈর্যহারা হননি। কঠিন বিপদেও তাঁরা ধৈর্য ও সবরের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সবর ও ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কঠিন বিপদেও সত্যকে আঁকড়ে ধরা, দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়া, ধৈর্য ধরে বিপদ ও যাবতীয় প্রতিকূলতা মোকাবিলা করা এবং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহপাকের ওপর ভরসা রাখাই শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা ও দর্শন। গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা সৈয়দ আবু তালিব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ-গবেষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বিদেশী অতিথি ছিলেন শ্রীলংকা থেকে আগত ড. আল্লামা শাহ সূফি মুহাম্মদ এহসান ইকবাল আলকাদেরী। প্রধান অতিথি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) নেতৃত্বে নবী পরিবার তথা আহলে বায়তে রাসূলের (দ) নিষ্পাপ সদস্যগণ ধৈর্য ও ত্যাগের অসামান্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। দ্বীনের পথে চলতে নানা বাধা প্রতিকূলতা আসবে। তা কঠিন ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবিলা করাই শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা ও দর্শন।
মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান গবেষক আলহাজ¦ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। নবী পরিবারের পরোপকার ও মানবসেবার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা) এর কাছে এসে এক ব্যক্তি বললেন, হুজুর ঋণের ভারে আমি জর্জরিত। অথচ ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য আমার নেই। ঋণ নিয়েই আমাকে হয়তো মৃত্যুবরণ করতে হবে। হযরত ইমাম হোসাইন (রা) বললেন, আপনার ঋণের পরিমাণ কতো। লোকটি বলল ৬০ হাজার দিরহাম। নিজের পরিবারের ভরণ পোষণের কথা না ভেবে পুরো ৬০ হাজার দিরহাম লোকটিকে দান করে দিলেন হযরত ইমাম হাসান (রা)। এই হচ্ছে নবী পরিবারের দানশীলতা ও পরোপকারের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) ত্যাগ, ধৈর্য প্রেক্ষিত যুব সমাজ নিয়ে আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত্ তাহেরী। তিনি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মহাত্মা সদস্যগণের সবর ও ত্যাগের সিঁড়ি বেয়ে আমরা আজ দ্বীন ইসলামের মহা নিয়ামত লাভে ধন্য হয়েছি। কঠিন প্রতিকূল অবস্থায়ও ধৈর্যহারা না হওয়া, দ্বীন ও সত্যের ওপর অবিচল ও দৃঢ় থাকাই হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও শাহাদাতে কারবালার দর্শন ও শিক্ষা। আহলে বায়তে রাসূলের (দ) শাহাদাতে কারবালার দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আজহারি। তিনি বলেন, শাহাদাতে কারবালা মাহফিল কোনো ব্যক্তি বিশেষের প্রচারের জন্য সাজানো হয়নি, নবী পরিবারের শান ও মর্যাদা তুলে ধরতেই এবং তাঁদের প্রতি ভালোবাসার তাগিদেই এই মাহফিলের আয়োজন। আহলে বায়তে রাসূলের (দ) প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য ফরজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী আহমদ বিন ইউসূফ আল আজহারী। সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা সৈয়দ আলাউদ্দীন বলেন, আহলে বায়তে রাসূল (দ) ও সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তাঁদের প্রতি মহব্বত পোষণ ও আনুগত্যই ঈমানের দাবি। নাতে রাসুল (দ) পরিবেশন করেন মুহাম্মদ রুকনুজ্জামান সাইমুম। মাহফিল সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. আল্লামা জাফর উল্লাহ ও হাফেজ আল্লামা আহমদুল হক। অতিথি ছিলেন, চউকের সাবেক চেয়ারম্যান রাজনীতিবিদ আলহাজ¦ আব্দুচ ছালাম, গাউছিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, ছোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী হোসেন নোজাগ, এমআইসি গ্রুপ এর পরিচালক আলহাজ¦ সোয়াইব রিয়াদ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সিনিয়র আরবী প্রভাষক আল্লামা মুহাম্মদ আবুল হাশেম শাহ্, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার আরবি প্রভাষক আল্লামা গোলাম মোস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী। এছাড়া মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষস্থানীয়সহ সর্বস্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন, আওলাদবৃন্দ, বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহফিলের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আলহাজ¦ মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, পীরজাদা কাজী আবুল ফোরকান হাশেমী, খোরশেদুর রহমান, সিরাজুল মুস্তফা, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, আলহাজ¦ দিলশাদ আহমদ, ছাবের আহমদ চিশতী, ছালামত উল্লাহ, এস এম শফি, গাজী মুহাম্মদ ইদ্রিচ চেয়ারম্যান, আলহাজ¦ মুহাম্মদ বদিউল আলম, আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, মাহাবুবুল আলম, মনসুর সিকদার, আব্দুর রহমান, মাইনুদ্দীন মিঠু, ফরিদ মিয়া, শাহাব উদ্দিন, জহির উদ্দিন, খোরশেদ আালী চৌধুরী, নাজিব আশরাফ প্রমুখ। মিলাদ কিয়াম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশ ও বিশ^বাসীর শান্তি সমৃদ্ধি এবং যুদ্ধ সংঘাত হানাহনি থেকে বৈশি^ক শান্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। মাহফিলে ৬ষ্ঠ দিবস থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের মাহফিলে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে।