আজ : বুধবার ║ ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বুধবার ║ ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ║২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

এমভি আব্দুল্লাহকে মুক্ত করতে আল্টিমেটাম : মুক্তিপণ প্রশ্নে সবাই চুপচাপ

দিন যাচ্ছে কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। নানা উদ্যোগ নিলেও এখনো সুফল পাওয়া যায়নি। এদিকে জাহাজে থাকা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি শেষের পথে। আব্দুল্লাহকে মুক্ত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে সোমালিয়ান পুলিশ।

জলদস্যুদের হাতে পণবন্দী বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে মুক্ত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে সোমালি পুলিশও। দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পাটল্যান্ড পুলিশ বিভাগ বলছে, জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

শনিবার বিবিসি সোমালি বিভাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুফ বলেন, ‘জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি, যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়।’

তবে নিজেদের ভূমিতে অভিযান চালালেও, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে যেকোনো ধরনের অভিযানের ব্যাপারে আপত্তি আছে বাংলাদেশ সরকার ও মালিকপক্ষের।

কেননা, এই মূহুর্তে নাবিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার চাচ্ছে মুক্তিপণের মাধ্যমেই জাহাজটি উদ্ধার করতে।

বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, উদ্ধার অভিযান শুরু করলে তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তৈরি হতে পারে মৃত্যু ঝুঁকির মতো পরিস্থিতি। তাই এ ধরনের কোনো অভিযানে সায় নেই বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদফদরের মহাপরিচালক কমোডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ‘মৃত্যু ঝুঁকি আছে এমন কোনো অভিযানে অনুমতি দিবে না বাংলাদেশ সরকার। সরকার চাইছে আগের মতোই মুক্তিপণের মাধ্যমে দস্যুদের কাছ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করতে।’

এদিকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ শুরু হলেও এখনো মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়ে মুখ খুলছে না মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।

গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম মিজানুল ইসলাম বলেন,‘দস্যুদের সাথে আমাদের গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আলোচনা হয়নি।’

এমন অবস্থায় কেন এখনো মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।

গত প্রায় এক সপ্তাহ পণবন্দী বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে থাকলেও সেটিকে এখন নেয়া হয়েছে উপকূল থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে।

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্দী জাহাজের ২৩ জন নাবিক। এ অবস্থা থেকে মুক্তি নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় আছে পরিবারগুলো।

কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হয়। তারা বলছেন, পণবন্দী দশায় জাহাজের নাবিকদের সব চেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে পানির।

এ কারণে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়ছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন।

চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ খান জানান, জলদস্যুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে পানি ব্যবহারে। যে কারণে তার ভাইসহ কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

সোমালিয়ার পুলিশের বক্তব্য সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুফ বলেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন আছে জিফলের উপকূলীয় এলাকায়।

তিনি জানান, সেখানে জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি, যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়।’

মোহাম্মদ আলী আহমেদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমভি আবদুল্লাহর জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় নেই।

এরই মধ্যে জাহাজটিতে থাকা দস্যুদের জন্য মাদক সরবরাহের চেষ্টাকালে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পান্টল্যান্ড পুলিশ।

পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষ নিজেদের উপকূল ‘জলদস্যুমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে’ মাঠে নেমেছে বলেও বলা হচ্ছে।

পুলিশ কমান্ডার মারদুফ বলেন,‘জাহাজে থাকা জলদস্যুদের হাতে এখন দুটি বিকল্প আছে। হয় তাদের পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে, অথবা বিদেশী বাহিনী যেমন এমভি রুয়েন থেকে জলদস্যুদের ধরে নিয়ে গেছে, সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

সমুদ্র ও উপকূলে চাপে জলদস্যুরা

তিনবার স্থান পরিবর্তনের পর গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছিনতাইকৃত এমভি আব্দুল্লাহকে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলের একই জায়গায় নোঙ্গর করে রেখেছিল জলদস্যুরা।
যেটি ছিল উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে।

গত বুধবার বাংলাদেশী এই জাহাজটি ঘিরে টহল বাড়ায় ইউরোপীয় নৌবাহিনী। হেলিকপ্টারে করেও মহড়া দেয় এ বাহিনীটি।

এই ঘটনার পরই তৎপরতা শুরু করে সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটিকে তারা নিয়ে যায় গদবজিরান উপকূলের আরো কাছাকাছি। গত তিনদিন ধরে জাহাজটি সেখানেই আছে। যেটি উপকূল থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে।

জাহাজটির ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বড় ভাই ওমর ফারুক জানান, গত বৃহস্পতিবার তার ভাইয়ের সাথে তার যখন কথা হয় তখন সে জানিয়েছে এখন যেখানে জাহাজটিকে নোঙ্গর করা হয়েছে সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) স্যাটেলাইট ইমেজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে ছিনতাই হওয়ার পর থেকেই।

এই সংগঠনটি বলছে ইউরোপীয় নৌবাহিনী তৎপরতা বাড়ানোর পর থেকে অনেক সতর্ক হয়ে গেছে জলদস্যুরা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজটিতে থাকা জলদস্যুরা যখন দেখেছে চারদিক থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, মাথার ওপর থেকে হেলিকপ্টার উড়ছে … তখন জলদস্যুরা তাদের আরো সেইফ জোনে নিয়ে গেছে জাহাজটিকে।’

জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ঘিরে এবার পদক্ষেপ শুরু করেছে সোমালি পুলিশও।

বিবিসি সোমালি বিভাগকে গত শুক্রবার সাক্ষাৎকার দেন সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুফ।

তিনি জানান, ‘এমভি আবদুল্লাহতে থাকা জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি, যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনও সহযোগিতা না পায়।’

এমন অবস্থায় জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই বলেও জানান মারদুফ।

যে কারণে অভিযান চায় না বাংলাদেশ
ভারত মহাসাগরে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার এক ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় ভারতীয় নৌবাহিনীর। তারা ওই সময় বাংলাদেশী জাহাজে থাকা জলদস্যুদের ছবিও প্রকাশ করে।

এর তিনদিনের মাথায় ভারতীয় নৌবাহিনী মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজে এমভি রুয়েনে অভিযান চালায়।

ওই অভিযানে ১৩ জন নাবিককে তারা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। সেখান থেকে আটক করা হয় ৩৫ জন সোমালি জলদস্যুকে।

ধারণা করা হয় ওই এমভি রুয়েনকে ব্যবহার করেই এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিকে ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা।

ভারতীয় নৌবাহিনীর ওই অভিযানের পর তৎপরতা বাড়ায় ইউরোপীয় নৌবাহিনীর একটি দলও। বর্তমানে যারা বাংলাদেশী জাহাজটিকে পুরোপুরি পর্যবেক্ষণে রেখেছে।

বাংলাদেশী জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পরই জাহাজটির মালিকপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সাথে যোগাযোগ হয় ইউরোপীয় নেভাল ফোর্স ও ভারতীয় নৌবাহিনীর।

মাল্টার জাহাজ এমভি রুয়েনে অভিযান চালিয়ে নাবিকদের মুক্ত করার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ও ইউরোপীয় নেভাল ফোর্স রুয়েনের মতো আব্দুল্লাহ উদ্ধারেও একই ধরনের অভিযান চালানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিল।

তবে বাংলাদেশ সরকার কিংবা জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ তাতে রাজি হয়নি।

নৌপরিবহন অধিদফতর মহাপরিচালক কমোডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ‘ইউরোপীয় নেভাল ফোর্স ও ভারতীয় নৌবাহিনীর সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তবে আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান।’

আলম জানান, মৃত্যু ঝুঁকি আছে এমন কোনো অভিযানে অনুমতি দিবে না বাংলাদেশ সরকার।

একই অবস্থান মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপেরও। তারাও মুক্তিপণের বিনিময় ছাড়াতে চাচ্ছে জাহাজটি।

বুধবার কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিক ও জাহাজের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে, কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে নই আমরা।’

মুক্তিপণ প্রশ্নে সবাই চুপচাপ

২৩ জন নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহকে বন্দী করার ৯ দিন পর জলদস্যুরা গত বুধবার মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করে।

ওই দিন থেকে যোগাযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানালেও কত টাকা কিংবা মুক্তিপণ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি মালিকপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমাদের সাথে কয়েক দফায় কথা হয়েছে। তবে কোনো টাকার অঙ্ক এখনো তারা বলেনি।’

মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়ে আলোচনা না হলে তাহলে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘কথা হয়েছে পণবন্দী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে টাকার অঙ্ক চাওয়া কিংবা তা প্রকাশ হতে আরো সময় লাগতে পারে।

সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘এত শিগগিরই যে তারা মুক্তিপণ চাইবে এমনটি ভাবার সুযোগ নাই। এখনো তাদের হাতে সময় আছে। তারা হয়তো অনেক কিছু বিবেচনা করেই মুক্তিপণ চাইবে।’

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’।

ওই জাহাজের ২৫ জন বাংলাদেশী নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন পণবন্দী করে রাখা হয়েছিল।

সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তখন ওই জাহাজটিও জলদস্যুদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল মুক্তিপণ দিয়ে। কিন্তু ওই সময় কত টাকা দিয়ে মুক্ত করা হয়েছিল সেটিও তখন প্রকাশ করেনি কেএসআরএম গ্রুপ।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন,’মুক্তিপণ নিয়ে বিভিন্ন জন নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। আমার জানামতে তারা এখনো কোনো টাকার পরিমাণ বলেনি।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেএসআরএম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের আলাপই হচ্ছে। এই বিষয়টি গণমাধ্যমে আসুক সেটি চাচ্ছে না মালিকপক্ষ।’

তিনি জানান, ‘এ কারণে কত টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে, বা কী কী বিষয়ে দরকষাকষি হচ্ছে সেটি আরো পরে জানানো হবে।’

এমভি আব্দুল্লাহর মুক্তিপণের তথ্য পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার পাওয়া জাহাজ ‘এমভি রুয়েন’ ছিনতাইয়ের পর জলদস্যুরা কত মুক্তিপণ চেয়েছিল সেটি জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী।

এক সপ্তাহ আগে ভারতীয় নৌবাহিনী ৩৫ জন সোমালি জলদস্যুকে আটক করার পর তারা জানিয়েছে এমভি রুয়েনের মালিকপক্ষের কাছে ৫০০ কোটি রুপি মুক্তিপণ চেয়েছিল সোমালি জলদস্যুরা।

ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে রবিবার হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এমন তথ্য।

উদ্বেগ বাড়ছে বন্দীদের পরিবারে

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে পণবন্দী ২৩ জন নাবিককে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন স্বজনরা।

কবে বন্দীদশা থেকে তারা ছাড়া পেয়ে ফিরে আসবে সেদিকে চেয়ে আছেন স্বজনরা। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, পণবন্দীদের সাথে পরিবারের যোগাযোগও অনেকটা কমে এসেছে।

তারা বলছেন, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর প্রথম দিকে দিনে অন্তত দু’য়েকবার কথা বলার সুযোগ দিলেও এখন সেই সুযোগ পাচ্ছে না নাবিকরা।

তিন চারদিন পর পর সামান্য সময়ের জন্য লুকিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা।

ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বড় ভাই ওমর ফারুখ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অল্প সময়ের জন্য চুরি করে গোপনে ফোন দিছিল। এরপর আর কথা হয়নি।’

তিনি জানান, তার ভাই যখন তাদের পরিবারের সাথে সর্বশেষ কথা বলেছে তখন একটি বিষয়ই জানিয়েছে তাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে খাবার দাবারের।

জাহাজে থাকা চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ খান রোববার জানান, দু’দিন আগে সর্বশেষ যখন তার ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে সে তখন জানিয়েছিল অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা ভাই।

খান জানান, ‘দিনে মাত্র খুব অল্প সময়ের জন্য পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছে জলদস্যুরা। এতে পানির অভাবে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

তবে পণবন্দী হওয়ার পর একবারও যোগাযোগ হয়নি, এমন পরিবারও রয়েছে।

জাহাজটিতে থাকা চিফ কুক শফিকুল ইসলামের সাথে তার পরিবার পণবন্দী হওয়ার পর এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেনি বলে জানান তারা ভাই দিদারুল ইসলাম।

তিনি জানান, জাহাজটির মালিকপক্ষ জানিয়েছে তার ভাইসহ অন্য নাবিকরা ভালো আছে।

কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘পণবন্দী নাগরিকদের পরিবারের সাথে শনিবার বসেছিল মালিকপক্ষ। পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যেকোনো মূল্যে সুস্থ অবস্থায় নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে।’

প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা আছে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিতে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জাহাজটি।

১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। সূত্র : বিবিসি

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ