
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ড. আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরীসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী একটি কুচক্রী মহল কর্তৃক প্রিন্ট, ইল্ক্ট্রেনিক , অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার এবং কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর বক্তব্য সম্বলিত ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে কথিত মানবন্ধনের প্রতিবাদে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম -১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ঈগল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত এমপির প্রত্যক্ষ মদদে তার উগ্র সমর্থক কর্তৃক সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকা প্রতিকের পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর নগ্ন হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
নির্বাচনের পর এলাকায় একাধিক খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, ধারাবাহিক চুরি-ডাকাতির ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আজকের এই অরাজকতার মূল নায়ক হচ্ছে একজন সন্ত্রাসী গডফাদার ডা. আ ম ম মিনহাজ। তার কাজ হলো কেউ এমপি হলে তার কাঁধে ভর করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা, অন্যের জমি-দখল করা, টিআর, কাবিখা নিয়ে সেগুলোর অর্থ লুটে খাওয়া। সাতকানিয়ায় বিভিন্ন মার্ডারের ঘটনায় পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে তার নাম উল্লেখ রয়েছে। আমি যখন এমপি নির্বাচিত হই, সে আমার কাছে আসে।
দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বলে বলে বিভিন্ন প্রকল্প ভাগিয়ে নিতে চায়। পরে যখন জানতে পারি, এসব সে নিজে খেয়ে ফেলছে। কেরানীহাট এলাকায় খাতুনগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব মুসলিম উদ্দিন ও ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালায় সে।
দেওদিঘী এলাকাও বিভিন্নজনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালায়। তার এইসব অপকর্ম এলাকাবাসী তথ্য প্রমাণসহ আমার সামনে হাজির করলে আমি তাকে আর কাছে ঘেঁষতে দিইনি। এরপর সে আদাজল খেয়ে আমার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। মোক্ষম সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁধে ভর করে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক নৌকাকে ডুবানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীসহ আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে। তার ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে শালীনতার তোয়াক্কা না করে আমার ও আমার স্ত্রীসহ পরিবারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক জঘন্য মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালানো।
কোন যোগ্যতা বলে সে আমার একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা আমার বোধগম্য নয়। সে বলে বেড়ায় আমি নাকি ভূয়া ডক্টর ও প্রফেসর। রাজনীতিতে আসার আগে আমার পুরো জীবনটা কেটেছে লেখাপড়া, গবেষণা আর সমাজসেবায়। ভারতের খ্যাতনামা লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটিতে আমার পিএইচডি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মিশর আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসরগণ উপস্থিত ছিলেন এবং উপস্থাপিত থিসিসের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।
নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ঐ কুচক্রী মহল নির্বাচনী শ্লোগান দিয়ে বলেছে, ‘বহুত দিন খাইও, আর ন হাইও। আমি তাদেরকে বলি, “আই আইন্নি তোঁয়ারা লুডিফুডি হাইয়ো, এবার হাইত ন পারি পল অইয়্যো। (দেশে আমি এনেছি, তোমরা লুটে পুটে খেয়েছো, এবার খেতে না পেরে পাগল হয়েছো।” ঐ কুচক্রী মহল কয়েকদিন আগে সাতকানিয়ার দেওদিঘী এলাকায় রমজান উপলক্ষে সেমাই, চিনি দেওয়ার জন্য ৩০/৪০ জন লোককে ডেকে আনে। তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে আমি, আমার সহধর্মীণিসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও মানহানিকর ব্ক্তব্য সম্বলিত প্লেকার্ড ও ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে কথিত মানববন্ধন করে তা বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
আমি ড. আবু রেজা নদভী দুইবারের জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। আমার প্রতিষ্ঠিত এনজিও সংস্থা আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিগত ২৬ বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এক হাজারের অধিক মসজিদ, ওজুখানা, মাদ্রাসা কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২০ হাজার শেল্টারসহ ৩০ হাজারের মত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করেছি আরববিশ্বসহ পৃথিবীর নানা দেশের সহায়তায়। বিভিন্ন দূর্যোগে এ পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষের হাতে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। কোরবানীর উপলক্ষে হাজার হাজার গরু-ছাগল বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। ২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর ৬৫০০ পরিবারকে ঘর সংস্কারের কাজ করে দিয়েছি। আর তারা কি-না বলে বেড়ায় আমি আমার এলাকার মানুষ থেকে টাকা নিয়েছি।
২১ মার্চ ২০২৪, দুপুর ১২টা অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস বিকম, লোহাগড়া আওয়ামীলীগের নেতা ওচমান গণি, সাতকানিয়া আওয়ামীলীগ নেতা জাকের, নলুয়া চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রমূখ।