
নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতকানিয়া :
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ড চৌধুরী বাড়ির মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুপের ছেলে মো. আবরারুল হক। খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে সে। গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আবরার।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়েই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশের পর জানতে পারেন মেধা তালিকায় ১৯৫৮তম হয়ে শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছেন। কিন্তু সেই সুখানুভূতি হারিয়ে তার, চোখেমুখে ফুটে ওঠে দুশ্চিন্তার ছাপ। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান হলেও দারিদ্র্যতার বাধা অতিক্রম করে মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তার।
অভাব-অনটনের মধ্যেও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে অদম্য মেধাবী মো. আবরারুল হকের। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চান্স পাওয়ায় এখন নতুন করে দেখা দিয়েছে ভর্তি হওয়ার দুশ্চিন্তা।
অদম্য মেধা নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে আবরার। কিন্তু বাবা মসজিদের ইমাম ও মা গৃহিণী। পরিবারে অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। আবরার ও তার দুই ভাইসহ পরিবারের সদস্য ৫ জন। বাবার একার পক্ষে এ সংসার চালানোই দুরহ হয়ে উঠেছে। তাই আবরারের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার।
আবরারুল হকের বাবা বান্দরবানের বেতছড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। মাসিক অল্প আয়ে কোনোরকমে চলে তার পরিবার। তিনি বলেন, ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এতে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের সংসার আমার। অনেক কষ্টে ছেলেকে এতদূর এনেছি। মেডিকেলে ভর্তি করাসহ পড়াশোনার ব্যয় বহনের মতো অবস্থা আমার নেই। কিভাবে ছেলের ভর্তির টাকার জোগান হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আবরারের মা তাহমিনা আকতার বলেন, ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও ডাক্তারি পড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে তা ভেবে পাচ্ছি না আমরা। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা ছাড়া অদম্য মেধাবী আবরারের ডাক্তারি ভর্তি অসম্ভব বলে জানান তিনি।
মেধাবী আবরারুল হক বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় অভাব অনটনের মধ্যেও বাবা আমাকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত অর্থ দিয়েছে। মেডিকেলের মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু এখন দেখি খরচের বহর। এত টাকা খরচ করে আমাকে মেডিকেল কলেজে পড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা একজন চিকিৎসক হয়ে আমি এ দেশের অসহায়, গরীব ও দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা করবো। কিন্তু সে আশা হয়তো বা আশায় থেকে যাবে। আমার স্বপ্ন পূরণে রবের কাছে প্রার্থনা, আমি যেন অসহায় দুঃখী মানুষের চিকিৎসক হিসেবে পাশে দাঁড়াতে পারি।
এবিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আবরারুল হক মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়ায় তার এলাকাবাসীসহ পুরো সাতকানিয়াবাসীর গৌরবের বিষয়। অদম্য মেধাবী আবরারুল হক মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়ায় আমরা উপজেলা প্রশাসন সবসময় আবরারুলের পাশে থাকবে। এবং তার ভর্তির বিষয় থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
তিনি আরও বলেন, সাতকানিয়ার বিত্তবান যারা আছেন তাদেরকে আহ্বান করবো, এই অদম্য মেধাবী আবরারের পাশে থাকার জন্য। সে যাতে ভবিষ্যতে একজন স্বনামধন্য এবং মানবিক ডাক্তার হয়ে সাতকানিয়াবাসী সেবা করতে পারে’।