আজ : বুধবার ║ ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : বুধবার ║ ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ║ ১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, উজাড় বনাঞ্চল

সাতকানিয়া সংবাদদাতা:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাতের অন্ধকারে বনাঞ্চল উজাড় করে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। সরকারি পাহাড় কেটে এসব মাটি স্থানীয় মানুষের বসতভিটা ও পুকুর ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে একটি চক্রের একাধিক ব্যক্তি মাটি বিক্রির সাথে জড়িত। তারা বিশেষ করে সপ্তাহিক সরকারি বন্ধের রাতগুলোতে পাহাড় কাটার নিরাপদ সময় বেঁচে নেন।

উপজেলার কেরানিহাট- বান্দরবান সড়কের পাশেই মইন্যার টেকে বনের বাগানের মধ্যে নির্বিচারে মাটি খোঁড়ার যন্ত্র (স্কেভেটর) দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিট কার্যালয়ের নাকের ডগায় নিয়মিত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

স্থানীয়রা জানান, সংঘবদ্ধ একটি চক্র মইন্যার টেক এলাকার বন বিভাগের পাহাড় থেকে প্রথমে একটি মাদারট্রি গর্জন কেটে বিক্রি করে দেয়। এরপর ওই পাহাড়ে থাকা বেশ কিছু আকাশমনি গাছ কেটে নিয়ে যায়। পরে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পার ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের উত্তর পাশ থেকে এমনভাবে মাটি কাটা হচ্ছে বাইরে থেকে দেখে বুঝার কোনো সুযোগ নাই। প্রতি রাতে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটার ফলে এখন ওই পাহাড়ে থাকা একমাত্র শতবর্ষী মাদারট্রি গর্জন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। আর অল্প মাটি কাটলেই গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়বে গর্জন গাছটি। ফলে পাহাড় থেকে আর যাতে মাটি কাটতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের অফিস থেকে সামান্য দূরের পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। কারণ যারা পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে তারা এলাকায় প্রভাবশালী। তারা যখন তখন যাকে তাকে কারণে–অকারণে মারধর করে। শুধু এই একটি পাহাড় নয়, চক্রটির নেতৃত্বে গত বছর মাহালিয়া এলাকায় একটি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। সরকারি গাছ ও পাহাড় তাদের প্রধান টার্গেট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর শুস্ক মৌসুম শুরু হলে বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের আওতায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। এসময় একাধিক সিন্ডিকেট মাহালিয়া, চিতামুরা ও হলুদিয়া এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে। এসব মাটি মানুষের বসতভিটা ভরাটে ব্যবহার করে। পাহাড় কাটা এসব মাটি প্রতি ডাম্পার বিক্রি করে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শত টাকায়।

সরেজমিন উপজেলার বাজালিয়া বড়দুয়ারা মইন্যার টেক ঘুরে দেখা যায়, বনের বাগানের মাঝ দিয়ে অস্থায়ী সড়ক বানানো হয়েছে। সড়ক দিয়ে পাহাড়ের উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ মুখে মাটি কাটা হয়েছে স্কেভেটর দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ নিধন করে পাহাড়ের এক পাশ থেকে মাটি কেটে কয়েক হাজার বর্গফুট করা হয়েছে সমতল। ফলে পাহাড়কে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। প্রকৃতির বুকে মানুষের এমন থাবায় জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

বাজালিয়া বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা ২টি ট্রাকসহ ৩ জনকে আটক করে মামলা দিয়েছি।

পাহাড় কাটার সাথে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তাদের নাম বলতে পারবো না। কারণ তারা এলাকায় কারো কাছে প্রভাবশালী আবার কারো কাছে দুষ্টু লোক হিসেবে পরিচিত। নাম প্রকাশ করলে তারা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।

পদুয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। আমাদের বনবিভাগের অভিযানে দুটি ডাম্পার ট্রাকসহ ৩ জনকে আটক করে বন আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বন আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। এখনো যদি পাহাড় কাটার খবর আসে আবারো অভিযান করা হবে।

বাংলাদশে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার জানান, পাহাড়কাটা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনে স্পষ্ট লঙ্গন। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হয় এবং জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। ফলে ঘটে মারাত্মক ভূমিধস। সাতকানিয়া বাজালিয়ায় পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ