দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:
হিজরি চতুর্দশ শতাব্দির মহান সংস্কারক আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (র.)’র ওফাত শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৫ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার বিকালে আ’লা হযরত কনফারেন্স চট্টগ্রাম জি.ই.সি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাহনামায়ে শরীয়ত ও তরীকত, মুর্শিদে বরহক, আওলাদে রাসুল, হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মুদ্দাযিল্লুহুল আলী) বলেন, ইতিহাসের এক ক্রান্তিকালে ইসলামবিদ্বেষী ও বিকৃতকারীদের বহুমূখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মুসলিম মিল্লাত যখন বিপর্যস্ত তখন ১৮৫৬ সালে ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আ’লা হযরত (র.)’র আবির্ভাব ছিলো সময়ের দাবী। তাঁর আগমনে সত্যান্বেষী মুসলমানরা পেয়েছে মুক্তির দিকদর্শন । তাঁর অমূল্য গ্রন্থাবলী ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। সুন্নিয়তের প্রচার-প্রসার ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তাঁর জীবন দর্শনের ব্যাপক চর্চা ও গবেষণা বড় বেশী প্রয়োজন। কুরআন, হাদিস, তাফসীর, ফিকহশাস্ত্র, ধর্মতত্ব, সূফীতত্ব, ভাষাতত্ব, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাঁর সদর্প বিচরণ, হানাফী মাযহাবের উপরলিখিত তাঁর ত্রিশ খন্ডের পঁচিশ সহস্রাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত বিশাল ফতওয়া গ্রন্থ ‘ফাতওয়ায়ে রেজভীয়্যাহ’ ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের এক প্রামাণ্য দলিল । ইসলামের মূলস্রোত সুন্নি দর্শনকে নিয়েই তাঁর জ্ঞান গবেষণার জগৎ বিনির্মিত। হুব্বে রাসূল তথা নবী প্রেমই ছিল তাঁর জীবন সাধনার মূল উপজীব্য। তিনি সুন্নি ঐক্যের প্রতীক, সুন্নিয়াত ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা । মুসলিম উম্মাহর এ ক্রান্তিকালে সংকট উত্তোরণে তাঁর জীবন-দর্শনের যথার্থ অনুসরণ জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিবে। ওফাত শতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠাপোষক ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ সূফী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত, কনফারেন্সে প্রধান আলোচক সিরিকোট দরবার শরীফ’র ছাহেবজাদা শায়খুল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ (মু.জি.আ.) বলেন বিশ্বব্যাপী ইসলামের সঠিক রূপ রেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রচার প্রসারে যুগেযুগে যেসব মহান মনীষীরা বিশ্বের সুন্নী জনতার কাছে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে হিজরি চর্তুদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা (রঃ) অন্যতম। মোঘল সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহীর মাধ্যমে উপ মহাদেশের মুসলামানদের ধর্মীয় অঙ্গনে যে ফিতনা ফাসাদের সৃষ্টি হয়েছিল, মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রঃ) তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও কর্ম প্রচেষ্টার দ্বারা এ বিরাট ফিতনা থেকে উপমহাদেশের মুসলমানকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন। ঠিক একই ধারায় ইমাম আহমদ (রা.) ইংরেজ শাসন শোষণের দুর্যোগপূর্ণ মূহুর্তে এতদাঞ্চলের মুসলমানদের ঈমান, আক্বীদা, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি অঙ্গনে যে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছেন তা আজ এক ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হতে চলছে। বিশেষতঃ ইংরেজরা এদেশে তাদের শাসন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করে রাখার জন্য মুসলমানদের ইস্পাতকঠিন ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির প্রয়াসে এক শ্রেণীর মৌলভীদের কে দিয়ে উপমহাদেশের মুসলমানদের শত বছরের আক্বীদাগত অঙ্গনে এক নতুন ধর্ম মতের প্রচলন করেন। তাদের মধ্যে ওহাবী, দেওবন্দী, কাদিয়ানী, রাফেযী, শিয়া অন্যতম। এসব বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত মতবাদ থেকে উপমহাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের আক্বীদা-আমল হিফাযতে ইমাম আহমদ রেযা (র.) তাঁর যুগে নিজে একাই ভূমিকা পালন করেন। তাঁর লেখিত দেড় সহস্রাধিক গ্রন্থাবলী আজও মুসলিম উম্মাহর ঈমান আমল হিফাযতের রক্ষাকবচ বলা চলে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে আওলাদে রাসুল আল্লামা হাফিজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ নুরানী মিয়া আল আশরাফী আল জিলানী, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ক্বারী শায়খ আহমদ নায়না আল আযহারী, শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ রাহাত খান কাদেরী বেরলভী, ফরহান নকী সিদ্দিকী, আনজুমান ট্রাস্ট’র সি.সহ সভাপিত আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহসিন, আনজুমান ট্রাস্ট’র সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আনজুমান ট্রাস্ট’র জয়েন্ট সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল হক, শায়খুল হাদিস মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী (মু.জি.আ.), আনজুমান’র প্রেস সেক্রেটারি অধ্যাপক কাজী শামসুর রহমান, জামেয়ার চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিদারুল ইসলাম, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান, অধ্যক্ষ খায়রুল বশর হক্কানী। আলোচনায় অংশ নেন- আল্লামা এম এ মান্নান, শায়খুল হাদিস আল্লামা কাযী মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী, জমিয়তুল ফালাহ্’র খতিব ক্বারী আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, ড. মুহাম্মদ জাফরউল্লাহ, উপাধক্ষ্য আল্লামা আবুল কাশেম ফজলুল হক, সাংবাদিক কাশেম শাহ্, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মুহাম্মদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, অধ্যক্ষ তৈয়্যব আলী, মাওলানা আবুল আসাদ জুবায়ের, মাওলানা জালাল উদ্দিন আহাজারি, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তালেব বেলাল, আলহাজ্ব নাঈমুল ইসলাম পুতুল, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, আলহাজ্ব মুফতি এ এস এম জালাল উদ্দিন ফারুকী, আলহাজ্ব বদিউল আলম কমিশনার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, অধ্যক্ষ ঈসমাইল নোমানী, জহির উদ্দিন তুহিন, মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ইউনুস রিজভী, মাওলানা আবুল হাসানাত আল কাদেরী, মাওলানা নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আরিফুর রহমান, মাওলানা ছগীর আহমদ আল কাদেরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুচ তৈয়বী, ড. মাওলানা জিয়াউল হক ও সৈয়্যদ আবু আজম প্রমূখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আ’লা হযরত ফাউন্ডেশন’র সভাপতি অধ্যক্ষ বদিউল আলম রেজভী ও অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ এরশাদ খতিবী। পরিশেষে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে দু’আ, মুনাজাত ও তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে কনফারেন্সের সমাপ্তি হয়।