দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ :
চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ‘রেডলেডি’ পেঁপে চাষের সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকেরা অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলাভুমিতে রেডলেডি পেঁপে চারা রোপণের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে পেঁপে চাষ শুরু করেন।
স্থানীয় কৃষকেরা পাহাড়ি এলাকায় ‘রেডলেডি’ পেঁপে চাষ করে তাদের চাহিদা পূরণ করে স্থানীয় বাজার ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তারা মনে করেন, সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে। ইতোমধ্যে এ সকল পেঁপে চাষীদের অনুসরণ করে অনেক কৃষক পাহাড়ি টিলায় রেডলেডি পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। ‘রেডলেডি’ জাতের পেপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এ চাহিদাও ব্যাপক- এমনটি জানিয়ে পেঁপে চাষীরা বলেন, পাহাড়ে পেঁপে বিপণন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে বাজারজাত করা গেলে স্থানীয় কৃষক পেঁপে চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় টিলায় ঘুরে দেখা গেছে অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলার সবুজে মোড়ানো ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বাগান। সারি সারি পেঁপে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারের পেঁপে। সেখানেই কথা হয় বাগানের বিভিন্ন পেঁপে চাষীদের সাথে। চাষীরা জানান, নিয়মিত বাগানে পরিচর্যার কাজ করতে হয়। বাগানে পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পূর্ণ জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে।
জানা যায়, তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির এ পেপে চারা রোপণের ৫-৬ মাসের মধ্যে প্রথম ফল পাওয়া যায়। লাল-সবুজ রঙের প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। খেতে সুমিষ্ট এ পেঁপে সুগন্ধিযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয় প্রক্রিয়াতেই বাজারজাত করা যায়। পাকা পেঁপে খুব সহজে নষ্ট হয় না বলে বাজারজাত করা সহজ। এ জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। রেডলেডি জাতের পেপে গাছের আয়ুস্কাল ২ বছরের অধিককাল।
পাহাড়ের ঢালুতে চাষাবাদ সহনীয় জানিয়ে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাছান ইমাম বলেন, পাহাড়ের মাটির উর্বরতা ও অনুকুল আবহাওয়া রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষের জন্য সহায়ক। শুধু ছত্রাকের আক্রমণ ছাড়া অন্য কোন রোগ হয় না। পাহাড়ের ঢালু অংশে এ জাতের পেঁপে সম্ভাবনাময় জানিয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পিত বাগান সৃষ্টিসহ সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এ জাতের পেঁপে পাহাড়ে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। রেডলেডি পেঁপে বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং দামও ভালো থাকায় দিন দিন এ পেঁপে চাষের দিকে ঝুকছে কৃষকেরা। প্রতি কেজি পাঁকা পেঁপে পাইকারি দামে ৬০-৭০ টাকা, খুচরা মূল্যে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলার লট এলাহাবাদ, পূর্ব ছৈয়দাবাদ, দোহাজারীর লালটিয়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বর্তমানে এ রেডলেডি পেঁপের চাষ হচ্ছে প্রচুর পরিমাণের। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ পেঁপে চট্টগ্রাম মহানগর পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মিটায়। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রেডলেডি পেঁপের চাষ ভালো হয়েছে, দামও রয়েছে প্রচুর। চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী তার নিজ পাহাড়ি এলাকায় এ রেডলেডি পেঁপের চাষ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান। গত বছর এ পেঁপের চাষ ভাল হওয়ায় চলতি বছর আরো বিশাল এলাকা জুড়ে এ রেডলেডি পেঁপের চাষ করেছেন তিনি। একইভাবে তার দেখাদেখি আইয়ুব মেম্বারসহ অনেকে রেডলেডি পেঁপের চাষ শুরু করেছেন। ফলে চন্দনাইশে উপজেলায় পাহাড়ি এলাকায় রেডলেডি পেঁপের চাষের কারণে অর্থনৈতিক বিল্পব ঘটবে কৃষকের মাঝে। তবে বর্গা চাষী এ রেডলেডি পেঁপের চাষ বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তরের লোকজনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফলন বাড়ানো এবং ফলের আকৃতি বৃদ্ধি করার জন্য যথাযথ সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রশিক্ষণের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন।