আজ : মঙ্গলবার ║ ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ : মঙ্গলবার ║ ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ║৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ║ ১৮ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

 পিতাহারা যন্ত্রণা শুধু আমরাই টের পাচ্ছি

‘বাবার মৃত্যুর পর থেকে প্রতিটা ক্ষণ দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটছে। যদিও জীবন থেমে থাকে না, চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাবা ছাড়া জীবন কতটুকু! কী যে দুঃসহ যন্ত্রণা তা শুধু আমরাই টের পাচ্ছি। সে ব্যথা শুধু যারা পিতাহারা হয়েছেন তারাই বুঝতে পারেন। প্রতিনিয়ত মিস করি বাবাকে।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম অধ্যায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড। ২০০৯ সালের এই দিনে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারান ৫৮ জন সেনাসদস্য।

ওই নির্মম বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে নিহত হন কর্নেল কুদরত ইলাহি শফিক। আজ ১১তম বার্ষিকীতে বনানীর সামরিক কবরস্থানে বাবাসহ শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এভাবেই নিজের কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।

জানান, ২০০৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ তার বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভার ক্যাম্পাসে থেকে পড়াশোনা করতেন সাকিব। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাবার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন ফের সিএমএইচে দেখা মেলে তখন আর বেঁচে নেই বাবা কুদরত ইলাহি শফিক। পিলখানায় মুখের ডান পাশে গুলি লেগে শহীদ হন তিনি।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চূড়ান্ত শাস্তি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পর্দার আড়ালে থেকে যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তাদের শাস্তি হয়েছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে। এই বিচারে ষড়যন্ত্রকারীরা সামনে আসেনি।

মেজর মোহাম্মদ মমিনুল ইসলামের মৃত্যুর ১২ দিন পর জন্ম হয় সাদাকাত বিন মমিনের। বাবার সঙ্গে সাদাকাতের পরিচয় শুধু দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিতে কিংবা অ্যালবামে। অ্যালবামে বাবার ছবি দেখেই বেড়ে ওঠা সাদাকাতের।

মেজর মমিনুলের বোন জেবুন্নাহার সরকার বলেন, জন্মের পর সাদাকাতকে তার বাবাকে দেখার সুযোগ দেয়নি ঘাতকরা। পিলখানায় হত্যা করা হয় তাকে। সাদাকাতের কাছে বাবা শুধুই ছবি।

তিনিও চূড়ান্ত বিচার নিয়ে সন্দেহের কণ্ঠে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারে প্রকৃত আসামিরা শাস্তি পাচ্ছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ মূল ষড়যন্ত্রকারীরা সামনে আসেনি।

উল্লেখ্য, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদফতরে বিপথগামী কিছু বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তা এবং নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে পরিচিত এটি। দীর্ঘ বিচার ও রায় শেষে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

কী ঘটেছিল সেদিন?

সেদিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিজিবির বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী সৈনিক। এদের একজন তৎকালীন মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে।

পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে তারা। বিদ্রোহীরা দরবার হল ও এর আশপাশ এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করতে থাকে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে।

পরে পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ। ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

বিডিআর পুনর্গঠন ও বিজিবি গঠন

পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিদ্রোহের আইন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আজকের সর্বশেষ সংবাদ