
দেশচিন্তা ডেস্ক: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও সারা দেশের মতো ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসবের আবহে পালিত হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। জেলার ৯টি উপজেলায় অবস্থিত মোট ২৩৫টি গির্জা ও চার্চে দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব উদযাপিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই খাগড়াছড়ি সদরের ছোটবাড়ী পাড়া সেন্ট পলস বিলিভার্স ইস্টার্ণ চার্চ, খাগড়াপুর, মিলনপুর, আপার পেরাছড়া, গাছবান, চেলাছড়া, মহালছড়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট চার্চগুলোতে বিশেষ আরাধনা, প্রার্থনা, ধর্মীয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, উপহার সামগ্রী বিতরণ ও মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।
খ্রিস্টান ভক্তরা জানান, বড়দিন কেবল একটি উৎসব নয়- এটি ভালোবাসা, ক্ষমা ও শান্তির শিক্ষা ধারণ করার দিন।
একজন খ্রিস্টান ভক্ত বলেন, ‘যীশু খ্রিস্ট আমাদের শিখিয়েছেন মানুষকে ভালোবাসতে, ক্ষমা করতে ও সহমর্মী হতে। বড়দিন আমাদের সেই শিক্ষা নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।’
কেন্দ্রীয় আয়োজন ছোটবাড়ী পাড়া সেন্ট পলস চার্চে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের ছোটবাড়ী পাড়ায় অবস্থিত সেন্ট পলস বিলিভার্স ইস্টার্ণ চার্চে জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বড় পরিসরে বড়দিন উদযাপন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ধনেশ্বর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জোনের উপ-অধিনায়ক মো. রিয়াজুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ চট্টগ্রাম বিভাগের রেভা. ফাদার মনজয় ত্রিপুরা, ছোটবাড়ী সেন্ট পলস চার্চের রেভা. ডিকন ফাদার শরৎ বাবু ত্রিপুরা, বড়দিন উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনিক ত্রিপুরা ও সদস্য সচিব তরুণ সেন ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন চার্চের ফাদার, পালক ও মহাপালকরা।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ চট্টগ্রাম বিভাগের রেভা. ফাদার মনজয় ত্রিপুরা বলেন, ‘যীশু খ্রিস্ট মানুষের জীবনে আলো হয়ে এসেছিলেন। তার জন্ম আমাদের শিখিয়েছে ভালোবাসা, ত্যাগ ও ক্ষমার মাধ্যমে সমাজকে সুন্দর করতে। আজকের পৃথিবীতে শান্তি ও সহাবস্থানের জন্য এই শিক্ষাগুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
বড়দিন উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব তরুণ সেন ত্রিপুরা বলেন, ‘খাগড়াছড়ির পাহাড়ি-বাঙালি সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে বড়দিন উদযাপন করছে, এটাই আমাদের শক্তি। এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকলেই সমাজ এগিয়ে যাবে।’
জেলা পরিষদের সদস্য ধনেশ্বর ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বলেন, জাতি অন্ধকারে চলে, তারা আলো দেখতে পেয়েছে, এই ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্য দিয়েই বড়দিনের তাৎপর্য প্রকাশ পায়। যীশু খ্রিস্ট ভালোবাসা, শান্তি ও ক্ষমার যে বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, তা যদি আমরা ধারণ করতে পারি, তবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা হবেই।
খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, বড়দিন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে সব গির্জা ও চার্চে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
উৎসবমুখর এই দিনে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবিকতার বার্তাÑ যা বড়দিনের মূল চেতনাকেই প্রতিফলিত করে।










