
দেশচিন্তা ডেস্ক: জশ টংয়ের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল স্লিপে মুঠোয় পুরতেই ছুটে গেলেন মার্নাস লাবুশেন। বেশি দূর যাওয়ার সুযোগই পেলেন না। সতীর্থদের আলিঙ্গনে আটকে গেলেন তিনি। এই আনন্দ শুধু একটি টেস্ট জয়ের নয়, এটি মর্যাদার অ্যাশেজ জয়ের উৎসব।
অ্যাডিলেইড টেস্ট জিতে মাত্র তিন ম্যাচেই ‘ছাইদানি’ নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া।
পার্থে দুই দিনে, ব্রিসবেনে চার দিনে জয়ের পর অ্যাডিলেইডে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম দিন পর্যন্ত। শেষ দিনে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইংল্যান্ড। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
৮২ রানের জয়ে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে অ্যাশেজ ধরে রাখার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করল অজিরা। মাত্র ১১ দিনের ক্রিকেটেই তুমুল আলোচিত এই মর্যাদার লড়াইয়ের ফয়সালা হয়ে গেল।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) পঞ্চম দিনে ৬ উইকেটে ২০৭ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে ইংল্যান্ড। জেমি স্মিথ ও উইল জ্যাকস লড়াইয়ে নামেন।
দিনের খেলা শুরুর ৪৮ মিনিট পর বৃষ্টিতে প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ থাকে ম্যাচ। গ্যালারিতে থাকা ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলের সমর্থকগোষ্ঠী ‘বার্মি আর্মি’ উল্লাসে স্বাগত জানায় সেই বৃষ্টিকে। খেলা শুরু হলে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন স্মিথ ও জ্যাকস।
৫টি চার ও ২টি ছক্কায় স্মিথ তুলে নেন নিজের প্রথম অ্যাশেজ ফিফটি। তবে দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর তৃতীয় ওভারে ৯১ রানে ভাঙে এই জুটি।
মিচেল স্টার্ককে টানা দুই বলে দুটি বাউন্ডারি মারার পরই ভুল করেন স্মিথ। পরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন কামিন্সের হাতে।
এরপরও ইংল্যান্ড পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। জ্যাকসের সঙ্গে ব্রাইডন কার্স গড়ে তোলেন আরেকটি প্রতিরোধ। ন্যাথান লায়ন হ্যামস্ট্রিং চোটে মাঠ ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে আক্রমণে আনতে হয় ট্রাভিস হেড ও লাবুশেনের মতো অনিয়মিত বোলারদের। হেড একাই করেন ১৫ ওভার। তবে শেষ পর্যন্ত স্কট বোল্যান্ডের বলে জশ টংয়ের এজ ধরা পড়লে সব শেষ।
এর আগে এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করে ৩৭১ রান, অ্যালেক্স ক্যারির সেঞ্চুরি (১০৬) ছিল ইনিংসের মূল আকর্ষণ। জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ২৮৬ রানে, বেন স্টোকস করেন সর্বোচ্চ ৮৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রাভিস হেডের ঝলমলে ১৭০ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৩৪৯। সব মিলিয়ে ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ৩৫২ রানে।
এই জয়ে অস্ট্রেলিয়া টানা পাঁচটি অ্যাশেজ সিরিজ ধরে রাখল। এর মধ্যে তিনটি জিতেছে, দুটি ড্র। ইংল্যান্ড সর্বশেষ অ্যাশেজ জিতেছিল ২০১৫ সালে, তা-ও নিজেদের মাঠে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের জয়হীন ধারা বেড়ে দাঁড়াল ১৮ ম্যাচে, আর অ্যাশেজ না জয়ের অপেক্ষা গড়াল ১৪ বছরে।
‘বাজবল’ দর্শনে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল ইংল্যান্ড। বাস্তবে সেটি ভেঙে পড়েছে প্রথম তিন টেস্টেই। এতটাই যে অধিনায়ক বেন স্টোকস, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও ক্রিকেট পরিচালক রব কির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখন মেলবোর্ন বা সিডনিতে অন্তত একটি টেস্ট জিতে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোই হবে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে, সিরিজ শুরুর আগে দল নির্বাচন ও স্কোয়াডের বয়স নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া আবারও প্রমাণ করল, ঘরের মাঠে তারা এখনো ইংল্যান্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১১ সালের পর থেকে সেই চিত্র বদলায়নি, অ্যাডিলেইডেও বদলাল না।

















