দেশচিন্তা নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়ার মনসা বাদামতল থেকে পৌরসদরে ইন্দ্রপুল বাইপাস সড়কের মাথা পর্যন্ত ৭টি বাঁক রয়েছে ৭ কিলোমিটার সড়কে । গত দেড় বছরে সড়ক দুর্ঘনায় ১০ জন নিহতসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক । বর্তমানে এ সড়কের ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক ও বাঁক সোজাকরণ প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। এর টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ৬ লেনের ১৩ হাজার টাকার একটি পৃথক প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা যায়, শাহ্ আমানত কর্ণফুলী সেতু থেকে দোহাজারী শঙ্খ নদীর ব্রিজ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে ৫০ বাঁক যেন মরণফাঁদ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কর্ণফুলী শাহ্ আমানত ব্রিজ থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৫০টি বাঁকের কোন সংস্কার হয়নি। এর মধ্যে মহাসড়কের পটিয়ার মনসা বাদামতল থেকে পৌরসভার ইন্দ্রপুল বাইপাস সড়কের মাথা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে ৭টি বাঁক রয়েছে। এ বাঁকের কারণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান ও টেকনাফগামী যাত্রীদের যাতায়তে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবং সড়ক দুর্ঘটনায় গত দেড় বছরে প্রায় ১০ নিহতসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটিয়ার মইজ্জাটেক পর্যন্ত মনসার টেক, বাদামতল, নয়াহাট শাহ আমানত ফিলিং স্টেশন, হযরত আকবর শাহ মাজারের পাশে দুইটি, গৈড়লার টেক, আমজুর হাট টেকসহ ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে পটিয়া মনসার টেক থেকে দোহাজারী শঙ্খ ব্রিজ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ সড়কে অধিকাংশ ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে অদক্ষ চালকের দ্বারা। এদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরও রয়েছে। প্রায়শ দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে শাহ্ আমানত সেতু থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ৪ লেনের যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে পটিয়ার মনসা বাদামতল থেকে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজাহারী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে টেন্ডার দেয়া হয়। এতে রাস্তার দুইপাশের জায়গার হকুম দখল, বাকঁ সোজাকরণসহ বাইপাস সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়। ইসলাম ট্রেডিং নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের টেন্ডার গ্রহণ করেন। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও নির্দিষ্ট মেয়াদে এ ঠিকাদার কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। তৎমধ্যে ভাটিখাইনের শ্রীমাই খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ এবং চক্রশালী গীরিশ চৌধুরী বাজার এলাকায় কালভার্ট ও করল এলাকায় একটি ব্রিজসহ কিছু রাস্তার কাজ করা হয়। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় বাকি প্রায় ৮০ কোটি টাকা ফেরত যায়। ফলে সেই প্রকল্প আর বাস্তাবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ে শুধুমাত্র পটিয়ার ইন্দ্রপুল থেকে গিরিশ চৌধুরী বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক পটিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে গত ২০১৭ সালে টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানের এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে আগামী এপিল মাসের মধ্যে সড়কটি যানবাহন চলচলের জন্য উদ্বোধন করা হবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী জাহেদ হোসেন জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৬ লেন বিশিষ্ট একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তা অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। এই ৬ লেনের মধ্যে মূল সড়কের দুই পাশে ছোট যান চলাচলের দুটি লেইন থাকবে।
এ ব্যাপারে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেছেন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য চার লেন ও দুইপাশে সিএনজি চলাচলের জন্য দুই লেনসহ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) একনেকে পাস হয়েছে। বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তৎমধ্যে ইন্দপুলের চানখালী খালের সেতু নির্মাণে ৭৫ কোটি টাকা এবং ভেল্লাপাড়া সেতুর জন্য একশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।